কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া একজন চিকিৎসক এবং অবসর যাওয়া দুজন চিকিৎসককে করোনা ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
গত বছরের ৩ জুলাই কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম নুর উদ্দিন আবু আল বাকী রুমির করোনা শনাক্ত হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ওই দিন রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১৭ জুলাই গভীর রাতে তিনি মারা যান। এরপর তার মরদেহ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
প্রায় একবছর আগে করোনায় প্রাণ হারানো ওই মৃত চিকিৎসককে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ থেকে তার নিজের জেলা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে পদায়ন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনা অতিমারিতে নুরুদ্দীন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবেন। বুধবারের (৭ জুলাই) মধ্যে তাকে সেখানে যোগদানের কথা বলা হয়েছে।
অপরদিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে একসময় কর্মরত থাকা আজফার উদ্দীন শেখ নামের এক চিকিৎসককে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা ইউনিটে কাজ করার জন্য পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু আজফার উদ্দীন শেখ নামের ওই চিকিৎসক বর্তমানে আর চাকরিতে নেই। গত বছর তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অপর এক অধ্যাপক ডা. মাসুমা আখতারকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পদায়ন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই চিকিৎসক এখন আর হাসপাতালে কর্মরত নন। অন্তত মাস ছয়েক আগেই তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব জাকিয়া পারভীন এ প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। বুধবারের মধ্যে তাদের পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনায় মৃত এক চিকিৎসক এবং চাকরি থেকে অবসর এবং বহিষ্কার হওয়া দুজন চিকিৎসককে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ থেকে মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বদলির ঘটনায় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ থেকে একসঙ্গে ৪৮ চিকিৎসককে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৫ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে এসব পদায়ন করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ অতিমারি সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত স্বাস্থ্য বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সংযুক্তিতে পদায়ন করা হলো।’
প্রজ্ঞাপনের ওই তালিকায় করোনায় প্রাণ হারানো চিকিৎসক নুরুদ্দীন আবু আল বাকী, অবসরে যাওয়া ডা. মাসুমা আখতার ও চাকরি হারানো আজফার উদ্দীন শেখকে পদায়ন করা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি এস এম মুসতানজীদ বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থা কতটা বেহাল। তারা কতটা অদক্ষ। সেখানে এত সচিব, উপসচিব, শতাধিক কর্মচারী তাহলে কী দায়িত্ব পালন করেন? খোঁজ-খবর না নিয়ে এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করার বিষয়টি চরম দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় বহন করে।’