কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর অপরিপক্ক টমেটো কেমিক্যালে পাকাচ্ছে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। রাইপেন নামের ঔষধ স্প্রে করে সবুজ টমেটো লাল রংঙে পরিণত করা হচ্ছে। ক্যামিকেল ব্যবহারকৃত কাঁচা টমেটো পাকিয়ে বাজারজাত করছে ব্যবসায়ীরা। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভোক্তাদের।চলছে ভরা শীত। পৌষের কাঁচাবাজারে অন্যান্য শীতের সবজির সাথে উঠছে টমেটো। রসনা বিলাসী বাঙালির খাবারে সালাদের তালিকা পূরণে ইতোমধ্যেই পাকা টমেটোর ব্যপক চাহিদা সারাদেশে, তরকারি আর ভর্তায় টমেটো ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সেই সুবাদে কৃষকের আগ্রহও বেশি টমেটো চাষে। তবে বিপত্তির কথা হলো বাজারের চাহিদা পূরণ আর প্রায় দ্বিগুন দাম গুনে নিতে সাধারণ ভোক্তার হাতে না যেতেই এসব টমেটোতে মাখানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল ও হরমোন জাতীয় স্প্রে। এই অপরাধ পাহারা দিচ্ছে খোদ স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি,এমন অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় কয়েকশো একর জমিতে প্রতিবছর চাষ হয় টমেটো। এবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। চাষাবাদের অধিকাংশই আদাবাড়িয়া, বোয়ালিয়া ইউনিয়নে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, এবছর দৌলতপুরে দেড়শো হেক্টরের বেশি টমেটো চাষ হয়েছে। কৃষকের এসব ফসলে ক্ষতিকর রাসায়নিক না মেশাতে আমরা সচেতনতা সৃষ্টি ছাড়া কোন ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারি না।
দৌলতপুরে উৎপাদিত টমেটো, চাষীরা বিক্রি করেন বিভিন্ন জুস ও সচ্ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে অথবা স্থানীয় আড়তে। বিক্রির আগেই কাঁচা টমেটো বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঢেকে রেখে ও রাসায়নিক মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে পাকানো হচ্ছে প্রকাশ্যে। অনেক ব্যবসায়ী আবার টমেটো কিনে নিজেই করে নিচ্ছেন কৃত্রিম প্রক্রিয়াজাত।
সরেজমিনে দেখা যায় আদাবাড়িয়া ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ফসলের মাঠে আলাদা-আলাদা ঘেরে অনৈতিক ভাবে ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে এসব টমেটো প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। প্রতিদিনই ভোক্তা পর্যায়ে চলে যাচ্ছে এসব ক্ষতিকর টমেটো।
উপজেলার কৃষক ইয়ারুল হাসান, বকুল, আবু সাঈদ, আলতাফ হোসেন, রফিক, ক্রেতা ইয়ার আলীকে এসব কাজে লিপ্ত থাকতে দেখা গেলেও তারা অস্বীকার করেন বিষয়টি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই আবার অবলীলায় বলে দিচ্ছেন টমেটো পাকাতে ও বাজারজাত করতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের কথা।
উপজেলার তেকালা এলাকার কীটনাশক ও সারের দোকানে দেখা যায় হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক। যেগুলো মূলত বাজারে এসেছে ফসলের গাছের শারীরিক বৃদ্ধি এবং দ্রæত ফুল-ফল আনতে ব্যবহারের জন্য।
গণমাধ্যমে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক তেকালার অবসরপ্রাপ্ত একজন সেনাবাহিনী সদস্য জানান– আমি নিজেও কৃষক, চাষাবাদ করি, প্রতিবছর স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ কে এখানকার কৃষকেরা ম্যানেজ করে (টাকার বিনিময়ে) রাসায়নিক মেশানোর কাজ করে। একাধিক সুত্র জানিয়েছে এবছরও একই ভাবে পুলিশকে টাকা দিয়ে রাসায়নিক মেশানো চলছে।
এ প্রসঙ্গে ফাঁড়ি ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর ফসিউর রহমান বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা। এধরণের অপরাধ না করতে আমরা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করে থাকি।
একই পুলিশ ফাঁড়ির অন্তর্ভুক্ত ধর্মদহ গ্রামের আরেক যুবক জানান, সম্প্রতি ফাঁড়ি ইনচার্জ ফসিউর কে নগদ দু’হাজার গুনে দিয়েছেন তিনি, তবে সেখানে ফসিউর রহমানের দাবি ছিলো আরও বেশি।
অভিযোগ রয়েছে, কৃষকের কাছ থেকে বিঘা প্রতি এবং ক্রেতার কাছ থেকে বস্তা প্রতি টাকা আদায় করে বিশেষ চক্র।
উপজেলা প্রশাসন থেকে বেশ দূরবর্তী হওয়ায় এসব এলাকা নিয়মিত তদারকি সম্ভব হয় না, স্থানীয় দায়িত্বশীলদের সহায়তায় গোপনে কাজটি করে আসছেন টমেটো ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা। আবার, অনেকেই করছেন সচেতনতার অভাবে।
এদিকে, খাবারে ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার ভীষণ ঝুকিপূর্ণ বলে বর্ননা রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে।