Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
কুষ্টিয়ায় পিঁয়াজ চাষে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ: লাগামহীন চারার দাম

কুষ্টিয়ায় পিঁয়াজ চাষে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ: লাগামহীন চারার দাম

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

কৃষকদের প্রধান অর্থকারী ফসলের মধ্যে পিঁয়াজ অন্যতম। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পিঁয়াজের চাহিদাও অপরীসীম। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে পিঁয়াজ ও পিঁয়াজের দাম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা রয়েছে গেল কয়েক বছর ধরে। বাজার নিয়ন্ত্রনে মনিটারিং কাজ বৃদ্ধি করেছে সরকারি ও বে-সরকারি দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৃন্দ।সেই আলোচিত পিঁয়াজ চাষে কৃষকদের এবছর খরচ বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি।পিঁয়াজের বীজ থেকে চারার দাম এবছর যেন লাগামহীন। সবমিলে সকল জনসাধারণের পিঁয়াজের ঝাঁজ থাকছে এবছরও। দামও বাড়তে পারে কয়েকগুণ।
সরেজমিন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ ও বাজার ঘুরেঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পিঁয়াজের বীজ গেল বছর খোলা বাজারে ৩/৪ হাজার এবং অফিসের বীজ ৫/৬ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবছর তা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা। কোথাও ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও পিঁয়াজের চারা গেল বছর ১৫/২০ টাকা কেজি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ১১৫/১২০ টাকা। যা কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ফলে পিঁয়াজ চাষের জন্য ফেলে রাখা জমি গুলোতে অন্য ফসল চাষের চিন্তা ভাবনা করছে কৃষকরা।
এবিষয়ে যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিন বিঘা জমির জন্য বীজ কিনেছিলাম দুই কেজি ১৬ হাজার টাকা দিয়ে। কিন্তু চারায় মার খেয়েছি। হয়তো ১৫ কাটা জমিতে পিঁয়াজ লাগানো যাবে। তিনি আরো বলেন, গত বছর পিঁয়াজের চারা ১৫/২০ টাকা কেজি হলেও এবছর ১১৫/১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাও আবার পাওয়া যাচ্ছেনা। একই গ্রামের কৃষক আমিরুল বলেন, পিঁয়াজ চাষে খরচ বেড়েছে দুই থেকে তিন গুন। বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এবছর পিঁয়াজের দাম হবে প্রচুর। কৃষক জিন্না বলেন, মাঠের পর মাঠ খালি পরে আছে। এবছর মানুষের পিঁয়াজের চারা নেই। কিনতেও পারছেনা। পিঁয়াজের জমিতে সবাই গম ও ভূট্টার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বাঁশগ্রাম ও চৌরঙ্গী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকজন ১০/১২ মণ পিঁয়াজের চারা এনেছে বিক্রির জন্য। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন কৃষক বলেন, এবছর মানুষের চারা হয়নি।ব্যাপক চারার সংকট। দেড় বিঘা জমিতে চারা লাগিয়ে ২৫ কেজির মত বেচে গেছে। বাজারে এনেছি বিক্রির জন্য। দাম হচ্ছে ৮০/১০০ টাকা। আহম্মদ নামের এক কৃষক বলেন, ১১৫ টাকা করে দেড় মণ চারা কিনেছি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন কৃষক বলেন, কৃষি অফিস থেকে এক প্যাকেট বীজ পেয়েছিলাম। অনেক যত্ন করেও চারা জন্মাতে পারিনি। চারা মারে দিয়ে বাজার থেকে ছোট পিঁয়াজ কিনে মূলকাটি পিঁয়াজ লাগাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, সময় মত বীজ না পাওয়ায় এবছর কৃষক চারায় ব্যাপক মার খেয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমান ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর। গত বছর পিঁয়াজের লক্ষমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর এবং অর্জিত হয়েছিল ৫ হাজার ৫৫ হেক্টর। যা কৃষি জমির ১৯ শতাংশেরও বেশি। এবছরও লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ হাজার ৫৫ হেক্টর।উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, এবার পিঁয়াজের বীজ বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।পিঁয়াজের দাম ভাল থাকায় এক শ্রেণির সিন্ডিকেটের কারনে দাম বাড়তে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে পিঁয়াজের চারার লাগামহীন দামের বিষয় এখনও জানা যায়নি।তিনি আরো বলেন, এবছর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ হাজার ৫৫ হেক্টর। তা অর্জিত হবে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না। উপজেলায় ১ হাজার ৮২০ জনকে কৃষকদের মাঝে বিশেষ প্রণোদনার বীজ ও স্যার বিতরণ করা হয়েছে। তবে এবছর সময়মত প্রণোদনা দেওয়া হয়নি বলেও জানান কৃষি অফিসার।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply