কুষ্টিয়া প্রতিনিধি !!!
করোনা সংক্রমণের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায় প্রথম কুষ্টিয়া। জুন মাসে পুরোটাই কুষ্টিয়ায় করোনা দাপট ছিল। অস্বাভাবিক হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে কুষ্টিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে করোনা সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আরও ৭ জন মারা গেছেন। ৩৪২ নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪০.০৫ শতাংশ।
শুক্রবার (০২ জুলাই ) সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও কুষ্টিয়া জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ নিয়ে গত ৬ দিনে কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ১৯৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৮ হাজার ১৮৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ১৩ দিনেই এখানে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২১৮ মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৬১৬ জন।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ০৫ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১৩৭ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ৬১ জন, দৌলতপুরের ২৭ জন, কুমারখালীর ১৩ জন, ভেড়ামারার ১৬ জন, মিরপুরের ১৩ জন এবং খোকসার ৭ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৭ জনের মধ্যে চার জন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার এবং বাকি তিন জন দৌলতপুর, কুমারখালী এবং মিরপুর উপজেলার বাসিন্দা।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আক্রামুজ্জামান মিন্টু জানান , প্রতি ঘরে করোনা পৌঁছে গেছে। সঠিকভাবে ও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই কাজটা গ্রামের মানুষ করছেন না। এতেই মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ এস এম মুসা কবিরের জানান , এখন আর কোনো দোষারোপ না করে কাজে মনোযোগ দিতে হবে। গ্রামের প্রতি ঘরে ঘরে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সবাইকে খোঁজ নিতে হবে। কারও জ্বর, ঠান্ডা, কাশি জাতীয় উপসর্গ দেখা দিলেই তাঁকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা নিতে যত দেরি হবে, মৃত্যুর ঝুঁকি তত বাড়বে।’
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, হাসপাতালে বাড়ছে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর চাপ। চাপ সামলাতে সবাইকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের প্রায় প্রত্যেককেই অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। কয়েক দিন থেকে হাসপাতালে করোনা রোগী ছাড়া আর অন্য কোনো রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। এবং জরুরী বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্য রোগীদের পার্শ্ববর্তী ডায়াবেটিস ও আদ্বদীন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এতদিন মানুষ লকডাউন উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়িয়েছে। মানেনি সামাজিক দূরত্ব, পরেনি মাস্ক। ফলে জেলায় এখন করোনার কমিউনিটি ট্রানজেকশন দেখা দিয়েছে। এছাড়া মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সহায়তা নিচ্ছে না। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে রোগী মৃত্যুর ঘটনা। গত কয়েকদিনে হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৮-১০ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জুনে করোনার দাপট বাড়বে, এমন একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। তবে এতটা হবে, সেটা কল্পনার বাইরে ছিল। মানুষকে সচেতন করা ছাড়া আর করোনা মোকাবিলার কোনো পথ নেই।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে। জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি করা হচ্ছে। সবার কাছ থেকে লকডাউন কার্যকর করতে সহযোগিতা পাচ্ছি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহের জন্য কুষ্টিয়ায় চলমান লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এ লকডাউন। এ সময় ওষুধ, নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া বাকি সব ধরনের দোকান, শপিংমল বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।