কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
করোনা সংক্রমণের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায় প্রথম কুষ্টিয়া। অস্বাভাবিক হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে কুষ্টিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে করোনা সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন করোনায় ও ৪ জন উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
রবিবার (০১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মোমেন, এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এদের মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৩৩ টি নমুনা পরীক্ষায় ১৮১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর ৯৬ জন, কুমারখালী ৮ জন, দৌলতপুর ৩১ জন, ভেড়ামারায় ৪ জন, মিরপুর২৯ জন, খোকসায় ১৩ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার গতদিনের চেয়ে বেড়ে ৩৩,৯৫ শতাংশ হয়েছে। এই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২০৮ জন।
এই দিকে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ২০০ বেডে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে এখন ভর্তি আছে ২৪৩ জন। তাদের মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগী ১৯১ জন। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। ৭০ শতাংশ রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।
গত ৭ দিনেই কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্ত ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১ হাজার ২১৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোমেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে মানুষ আগের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনার নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়ায় একজনের দ্বারা অনেক লোক আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসককে আরও কঠোর হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটিকে ডেডিকেটেড ঘোষণার পর থেকে রোগীর চাপ বাড়তে আছে। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের লোকবল কম। এ জন্য চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিনই শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালেও রোগীর চাপ বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আক্রামুজ্জামান মিন্টু বলেন, হাসপাতালে ২০০ শতাধিক পয়েন্টে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া ১৭টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুল চালু রয়েছে। বেশি গুরুতর রোগীদের জন্য আলাদাভাবে পেয়িং ওয়ার্ডে রাখা হয়। ঈদ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। রোগী বাড়লেও চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ভর্তির ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসার এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ায় গত দুই মাসে করোনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। তবে আশা করা যাচ্ছে, এটা কমে যাবে। আর প্রায় সব মানুষই মৃদু সংক্রমিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য ঈদপরবর্তী আক্রান্তের হার কমতে পারে।
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসিমুল বারী বাপ্পি জানান, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৩০টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার মধ্যে ১২টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের ভোগান্তি পৌঁহাতে হচ্ছে।