কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লা জেলায় মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষ এখনো করোনা টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন কিংবা রেজিষ্ট্রেশন করেন নি। অন্যদিকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনেও মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ এখনো টিকা নেবার জন্য নিবন্ধন করেন নি। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জেলায় করোনা টিকার জন্য নিবন্ধিত জনগোষ্ঠীর ৪২ শতাংশ মানুষকে টিকার অন্তত এক ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান কিছুটা এগিয়ে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। গত ডিসেম্বরেও করোনা টিকা গ্রহনে পিছিয়ে থাকা দেশের ১৫টি জেলার মধ্যে ছিলো কুমিল্লা। জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুজিবুর রহমান জানান, করোনা মোকাবেলায় মাস্ক এবং টিকা নেবার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সচেতনতার অভাবে কুমিল্লায় টিকা রেজিষ্ট্রেশন কম। এব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। জনসচেতনতা তৈরীতে জনপ্রতিনিধিদের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু টিকার ক্ষেত্রে তৃণমূলে জরপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা একেবারে নেই বললেই চলে। টিকা আছে পর্যাপ্ত, কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন না হলে কাকে টিকা দিবে স্বাস্থ্য বিভাগ। সুতরাং টিকার জন্য নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মোট নিবন্ধনের ৭৮ শতাংশ মানুষ টিকা নিয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে এই হার অনেক কম, মাত্র ৩৯ শতাংশ। তবে টিকার আওতায় খুব দ্রুত স্কুল কলেজ শিক্ষার্থী ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের আনা হচ্ছে। এপর্যন্ত এই বয়সী ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫৬ জন অন্তত এক ডোজ করোনা টিকা নিয়েছেন। জেলায় করোনা টিকার জন্য মোট নিবন্ধিতদের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ১৯০ জন। এর মধ্যে ২৬ লাখ ৯ হাজার ৮৩ জন অন্তত এক ডোজ টিকারও আওতায় এসেছেন। অনেকে প্রথম ডোজ টিকা নিলেও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে আসছে না সময় মত। কুমিল্লা জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা গেছে- সংক্রমন বাড়তে থাকলে মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু পরে আবার সেটা থাকে না। আবার সেসময় এক শ্রেণীর লোক মানুষকে ফ্রি তে টিকার নিবন্ধনের জন্য এগিয়ে আসে, তারাও আবার পরে থাকে না। কিন্তু পুরো জনগোষ্ঠীতে টিকার আওতায় আনতে হলে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ফ্রিতে টিকা নিবন্ধন সবসময় চালু থাকা দরকার। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ অনলাইনে টিকা নিবন্ধন জটিলতা মনে করে নিবন্ধন করে টিকা নিতে আগ্রহী হন না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কেউ আবার টিকা নিবন্ধনের বিনিময়ে টাকা উপার্জন শুরু করেছেন। কিন্তু তারা মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে নিবন্ধনকারীর মোবাইল নম্বর ব্যবহার না করে নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন সম্পন্ন করে দেন। এতে টিকা নিবন্ধনকারী প্রথম ডোজ পেলেও দ্বিতীয় ডোজের এসএমএসটি তারা পান না , যে কারনেও অনেকে টিকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে কুমিল্লায় তিন দিনে করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে ফ্রন্টলাইনার ও বয়স্কদের তালিকা থেকে এই বুস্টার ডোজ দেয়া হয়। সোমবার দুপুরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ গ্রহন করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। একই সাথে বুস্টার ডোজ গ্রহন করেন নারী নেত্রী এমপি পত্নী মেহেরুন্নেছা বাহার, কোতোয়ালি মডেল থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ সহিদুর রহমান, ওসি তদন্ত কমল কৃষ্ণ ধরসহ অারও অনেকে।