বশির আহমেদ, কুমিল্লা:
কুমিল্লা জেলা জুড়ে লকডাউন কার্যকর করা ও করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রতিদিনই মাঠে পর্যায়ে কাজ করছেন জেলা প্রশাসনের ২৩টি ভ্রাম্যমান আদালত। লকডাউনের গত ৪ দিনে আইন অমান্য করা, দোকানপাট খোলা ও মাস্ক না পরায় কুমিল্লা নগরীসহ ১৭ উপজেলায় ৪৫৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসময় বিভিন্ন ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের ৬ টি ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া জেলার ১৭ উপজেলায় জেলা প্রশাসনের ১৭টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। লকডাউনে সরকারী আইন অমান্য করায় বিভিন্ন মামলায় করা হচ্ছে জরিমানা। দ্বিতীয় দফা লকডাউনে নগরীতে ৬ জন ম্যাজিষ্টেট এর তত্ত্বাবধায়নে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সহযোগিতায় এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
জানা যায়, দ্বিতীয় দফা লকডাউনে নগরীর শাসনগাছা, টমছমব্রীজ, ধর্মপুর, রাজগঞ্জ, চকবাজার, ফৌজধারী মোড়ে ৬জন ম্যাজিষ্ট্রেট এর নেতৃত্বে লকডাইন কার্যকরে এ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে।ভ্রামমান আদালন পরিচালনা করেন, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তানজিমা আঞ্জুম সোহানিয়া, শামিম আরা সুমি, এসএম মোস্তাফিজুর রহমান, অমিত দত্ত, গোলাম মোস্তফা ও মাজহারুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, লকডাউনের গত ৪ দিনে আইন অমান্য করা, দোকানপাট খোলা ও মাস্ক না পরায় কুমিল্লা নগরীতে ৯০টি মামলায় প্রায় লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়ে।
এদিকে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া আফরিন ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এ কে এম ফয়সাল এর নেতৃত্বে ১৮ টি মামলায় ১০ হাজার ৭শ ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। সদর দক্ষিণের উপজেলা নিবার্হী অফিসার শুভাশিষ ঘোষ এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতে ২১ টি মামলায় ৩ হাজার ৭ শ টাকা জরিমানা করা হয়। বুড়িচং উপজেলা নিবার্হী অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতে ৫টি মামলায় ২ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়। চান্দিনা উপজেলা নিবার্হী অফিসার নাঈমা ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতে ১৫ মামলায় ৪ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দাউদকান্দি উপজেলা নিবার্হী অফিসার সেলিম শেখ এর ভ্রাম্যমান আদালতে ৬ মামলায় ১০ হাজার টাকা, মেঘনা উপজেলা নিবার্হী অফিসার প্রবীর কুমার রায়ের ভ্রাম্যমান আদালতে ৫টি মামলায় ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তিতাস উপজেলা নিবার্হী অফিসার রাশেদা আক্তারের ভ্রাম্যমান আদালতে ২১টি মামলায় ৩ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মুরাদনগর উপজেলা নিবার্হী অফিসার অভিষেক দাস ও সহকারি কমিশনার ভূমি সাইফুল ইসলাম কমল এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত ১৭টি মামলায় ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। সহকারী কমিশনার ভূমি দেবিদ্বার এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত ৯টি মামলায় ৫ হাজার ১শ টাকা জরিমানা করেন। বরুড়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার আনিসুল ইসলাম এর নেতৃত্বে ভাম্যমান অদালত ৪টি মামলায় ২ হাজার ১শ টাকা জরিমানা করেন। নাঙ্গলকোট উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা লামইয়া সাইফুল ও ভূমি কর্মকতা মিল্টন বিশ্বাস এর নেতৃত্বে ভ্রামমান আদালতে ৫ টি মামলায় ২ হাজার টাকা , চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নিবার্হী অফিসার মাসুদ রানার ভ্রাম্যমান আদালত ৪ টি মামলায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। লাকসাম উপজেলা নিবার্হী অফিসার এ কে এম সাইফুল ইসলাম এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতে ১১ টি মামলায় ২১ হাজার ৩শ টাকা জরিমানা করেন। মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী অফিসার সোহেল রানার নেতৃত্বে ৯ টি মামলায় ২ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করেন। লালমাই উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শারমিন আরার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত ৯ টি মামলায় ৫ হাজার ৬শ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। তাছাড়া হোমনা ও বি-পাড়ায় নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ সরকারি বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে অভিযান পরিচালনা করেন, তবে কোন অর্থদন্ড প্রদান করেননি।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তানজিমা আঞ্জুম সোহানিয়া বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কামরুল হাসানের দিক-নির্দেশনায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ২১ টি মামলায় ৭ হাজার ৭শ ৫০ টাকা অর্থদন্ড জরিমানা করি। আবার অনেককে সর্তক করে ছেড়ে দিয়েছি। মানুষকে সচেতন করার জন্যই আমরা মূলত কাজ করছি, মানুষ যাতে ঘরে থাকে। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হয়। আর সরকারি নির্দেশ অমান্য করে যারা দোকান খোলা রেখেছে তাদের নাম মাত্র জরিমানা করে সর্তক করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সাঈদ বলেন, লকডাউন কার্যকর করা ও করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও গনসচেতনতা তৈরীতে কাজ করছে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের নির্দেশনা জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্টেটগন। লকডাউনের গত ৪ দিনে আইন অমান্য করা, দোকানপাট খোলা ও মাস্ক না পরায় কুমিল্লা নগরীসহ ১৭ উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালতে ৪শ ৫৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসময় বিভিন্ন ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান সবসময় চলমান থাকায় পরিসংখ্যান কিছুটা বাড়তে পারে। জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান জানান, রেড জোন হিসেবে রয়েছে কুমিল্লা । এখানে আক্রান্ত ও মৃত্যর হার সবচেয়ে বেশি। লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করতে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। জনপ্রতিনিধি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই সমন্বিত ভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছি।