Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়নি, নথি-আলামত ধ্বংসে থমকে গেছে তদন্ত

কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়নি, নথি-আলামত ধ্বংসে থমকে গেছে তদন্ত

অনলাইন ডেস্ক:

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতায় ৫০টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ ও ৬ আগস্ট ২১টি থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১৩টি থানা। ফলে থানায় থাকা অনেক নথি ও আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের শিকার ২১ থানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যাত্রাবাড়ী, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, শ্যামপুর, খিলগাঁও, আদাবর, পল্টন, শেরেবাংলানগর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ওয়ারী ও খিলক্ষেত থানার। অন্য থানাগুলোরও যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা-ও এখনো পূরণ করা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অগ্নিসংযোগ করায় থানার মামলা ও নথিপত্রের পাশাপাশি কম্পিউটারও পুড়ে যায়।
এসব কম্পিউটারে রক্ষিত ছিল গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিপত্র। ভাটারা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আদাবর, পল্টন ও ওয়ারী থানায় এক হাজার ২২৬টি মামলার নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার তালিকা করা হয়েছে। বাকি থানাগুলোতে কী পরিমাণে মামলার নথিপত্র পুড়ে গেছে তার তালিকা এখনো তৈরি করা হয়নি।ভাটারা থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘থানায় রাখা সব নথিপত্র পুড়ে গেছে। এতে যে ক্ষতি হয়েছে তা আর পূরণ হওয়ার নয়।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, খিলক্ষেত ও খিলগাঁও থানার ওসিরা জানান, এই থানাগুলোতে লুট হওয়া, পুড়ে যাওয়া কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত মামলার নথিপত্রের হিসাব করা হচ্ছে। ডিএমপি সদর দপ্তরের ক্রিমিনাল ডাটাবেইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) থেকেও এসব তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আদালত থেকেও এ বিষয়ে সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।

ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীর কাজ আবারও স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো ডিউটি অফিসারসহ থানায় দায়িত্বরতরা হাতে লিখে বিভিন্ন অভিযোগ নিচ্ছেন। এখনো ইন্টারনেট সার্ভার ঠিক করা যায়নি বলে কিছু ক্ষেত্রে সেবা দিতে দেরি হচ্ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর।

ডিএমপি সূত্র আরো জানায়, যাত্রাবাড়ী থানার মামলার নথিপত্র সংরক্ষণ করা কম্পিউটার পুড়ে যাওয়ায় ওই সব মামলার নথিপত্রের তালিকা এখনো তৈরি করা যায়নি। এ ছাড়া বাড্ডা, আদাবর, ওয়ারী এবং শ্যামপুর ও শেরেবাংলানগর থানার এক হাজার ১০০টি মামলার আলামত পুড়ে গেছে।

মিরপুর মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, থানায় ৬৬০টি মামলার নথিপত্র এবং মালখানায় থাকা বিভিন্ন মামলার ২৩০টি আলামত পুড়ে গেছে। থানা ভবনে থাকা নিবন্ধন (রেজিস্টার) খাতাও পুড়ে গেছে। বিভিন্ন মামলার কেস ডকেট বা সিডি (সব নথিপত্র) পুড়ে গেছে।

এ ছাড়া মোহাম্মদপুর থানার ৮৯টি মামলার নথি পুড়ে গেছে। তবে কতগুলো মামলার আলামত ছিল, তা জানতে পারেনি পুলিশ। আগুনে বাড্ডা থানায় ১৩৭টি মামলার নথি ও ১৬০টি মামলার আলামত পুড়ে গেছে। শেরেবাংলানগর থানায় মামলার সব নথিপত্র এবং দেড় শর মতো আলামত পুড়ে গেছে। ওয়ারী থানার ৭৪টি মামলার নথি এবং ২১৫টি মামলার আলামত পুড়ে গেছে ও লুট হয়েছে। শ্যামপুর থানায় পুড়ে গেছে বা লুট হয়েছে ২৩৯টি মামলার আলামত।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত জুলাই মাসে সংঘাত-সহিংসতায় সারা দেশে দেড় শতাধিক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে (রাজধানীসহ ঢাকা জেলা) ১০৫টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যার বেশির ভাগই ঘটেছে পুলিশ বাহিনীর স্থাপনা ঘিরে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনার মধ্যে ১৬ জুলাই দুটি, ১৭ জুলাই ১০টি, ১৮ জুলাই ২৫টি, ১৯ জুলাই ৪১টি এবং ২০ জুলাই ২৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর ২১ জুলাই ৯টি এবং ২২ জুলাই তিনটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘সহিংসতায় বেশির ভাগ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে পুলিশ বাহিনীর স্থাপনাকে কেন্দ্র করে।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতার সবচেয়ে বেশি রোষানলে পড়েন পুলিশ সদস্যরা।

ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, ‘যেসব মামলার নথিপত্র পুড়ে গেছে সেগুলো ডিএমপির সিডিএমএস থেকে নিয়ে তদন্ত করা হবে। আর যেসব আলামত পুড়ে গেছে বা লুট হয়েছে, সে বিষয়ে আদালতের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিডিএমএসে ডিএমপির ৫০ থানার মামলাগুলোর তথ্য সংরক্ষিত আছে। তবে ডিএমপি সদর দপ্তরে মালখানা না থাকায় সেখানে থানাগুলোর আলামত রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই।’

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply