অনলাইন ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের প্রকোপ যদি আবার বাড়ে, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকারি অর্থ খরচে সর্বোচ্চ মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর সরকার একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারদর্শী সেনাবাহিনী গঠনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
গতকাল রবিবার সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিটকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাভার ক্যান্টনমেন্টে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাস যদি আবার ব্যাপক হারে দেখা দেয়, তখন আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। মানুষকে আবার আমাদের সহযোগিতা করতে হবে, চিকিৎসা করতে হবে, ওষুধ কিনতে হবে। হয়তো আরো ডাক্তার, নার্স আমাদের লাগবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। ঠিক যেটুকু আমাদের নেহাত প্রয়োজন, তার বেশি কোনো পয়সা এখন খরচ করা চলবে না। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ রেখেই সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বাজেটের অর্থ খরচে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কভিড-১৯-এর এই সংকটময় সময়েও মানুষের কল্যাণে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এবার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি, যেটা দেওয়া খুব কঠিন ছিল। তবু আমরা দিয়েছি। তার পরও বলেছি যে অর্থ খরচের ব্যাপারে সবাইকে একটু সচেতন থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ৯ পদাতিক ডিভিশনের ৮ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও অ্যাডহক ১১ বীর মেকানাইজড ব্যাটালিয়ন, ১০ পদাতিক ডিভিশনের ৬ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও ১৩ বীর, ১১ পদাতিক ডিভিশনের ৫৯ ইস্ট বেঙ্গল সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও ১২ বীর, ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের ১৫ বীর সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন, ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস (এসআইঅ্যান্ডটি) সংশ্লিষ্ট কমান্ডারদের কাছে জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন।
সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারি বজায় রেখে সেনা কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী দেশের সম্পদ ও মানুষের ভরসা এবং বিশ্বাসের প্রতীক। কোনো সেনাবাহিনী মানুষের আস্থা, বিশ্বাস যদি অর্জন করতে না পারে, তাহলে কখনো তারা কোনো বিজয় অর্জন করতে পারে না। তাই আপনাদের সবাইকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারি বজায় রেখেই আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর বাংলাদেশের জনগণ, এরা তো আপনাদেরই আপনজন। আপনাদেরই পরিবারের সদস্য। কাজেই তাদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আপনাদের কাজ করতে হবে।’
জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যেকোনো ইউনিটের জন্য ‘সম্মান ও গৌরবের বিষয়’ মন্তব্য করে পতাকা পাওয়া ইউনিটগুলোর উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা এই গৌরব অর্জন করেছেন। আমি আশা করি, জাতির আস্থা, বিশ্বাস অটুট থাকবে। দেশসেবায় আপনারা আত্মনিয়োগ করবেন। দেশমাতৃকার সেবা করাটাই হচ্ছে সব থেকে বেশি গৌরবের। কাজেই আপনারা সেদিকে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই পতাকা। এই পতাকা হচ্ছে একটি জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। এই পতাকার মান রক্ষা করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। প্রতিটি সৈনিক এবং আমি মনে করি জনসাধারণ, সবারই দায়িত্ব এই পতাকার মর্যাদা রক্ষা করা।’
বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী এখন শুধু দেশেই নয়, বরং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাতেও অবদান রেখে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় চেয়েছি আমাদের সেনাবাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনী যেন আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন এবং আধুনিক শিক্ষায় সুপ্রশিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে পারে।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি করোনা মহামারি মোকাবেলায় জনগণের সহযোগিতায় এগিয়ে আসায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে করোনা মোকাবেলায় তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’—এই বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় সব সময় নিবেদিতপ্রাণ। সে জন্য জাতিসংঘ যখনই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য চেয়েছে, পুলিশ বাহিনী চেয়েছে, আমরা সেটা দিয়ে যাচ্ছি, শুধুমাত্র আমরা যেহেতু বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাস করি। সংবিধানকে সমুন্নত রেখে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ শেষে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
সূত্র : বাসস।