অনলাইন ডেস্ক:
চার-পাঁচ দিন ধরে করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধন নিয়ে নানা জটিলতার পর অবশেষে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে। তার পরও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নির্দেশনা অনুসারে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব নয়, বরং নিবন্ধনপ্রক্রিয়াটি সহজ করে তা চলমান রাখা দরকার; না হলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আর এর দায় শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর এসে পড়বে। এ নিয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করছে। অনলাইনে কিভাবে সহজে নিবন্ধন করা যায় সে জন্য গুগলের সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে। আগামী তিন-চার দিন পর যে কেউ যেকোনো মোবাইল থেকে গুগলে সার্চ দিয়ে এই পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে পারবেন।’
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সরকারকে টিকার মেয়াদের বিষয়ে নজর রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, বর্তমানে যে টিকা হাতে রয়েছে, তৈরির পর এটির মেয়াদ তিন মাস। ফলে এপ্রিলের মধ্যে এই টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে। নিবন্ধন ধীরগতির কারণে যদি এটি সম্ভব না হয়, তবে অনেক টিকা নষ্ট হয়ে যাবে।
অবশ্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘নিবন্ধন নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে, সেটা কাটাতে আমরা বিকল্প হিসেবে সহজ পথ খুঁজছি। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষ যাতে টিকা নিতে পারে, সে জন্য সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এর জন্য আমরা মানুষকে উৎসাহিত করার কাজও করছি।’
৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধন শেষ করার নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ঠিক, আবার কিভাবে এটা করা যায় তার পথও খুঁজে বের করতে হবে।’
বাংলাদেশ ফার্মাকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘নিবন্ধনের সময় অবশ্যই বাড়াতে হবে। আর টিকা ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আছেন, তাঁদের টিকার মেয়াদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যদি কোনো কারণে প্রত্যাশার চেয়ে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কম হয়, তা নিয়ে সরকারকে আরেক ঝামেলায় পড়তে হবে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রচার-প্রচারণা বাড়িয়ে মানুষকে টিকামুখী করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশাবাদী, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান শুরুর পর পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। এখন মানুষের সাড়া কম পাওয়া গেলেও পরে এই দৃশ্য পাল্টে যাবে। সব দেশেই শুরুর দিকে কিছুটা ধীরগতি ছিল, পরে তা বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেশে দিনে দুই লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার যে টার্গেট নেওয়া হয়েছে তা পূরণ হবে বলে মনে করি। একপর্যায়ে চাহিদা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
টিকার নিবন্ধন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গতকাল সোমবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। পরে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, টিকাদান কর্মসূচি নির্বিঘ্ন করতে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। কোনো ছুটিও ভোগ করতে পারবেন না। টিকা দিতে আগ্রহী ও উপযুক্ত ব্যক্তিরা যেখানে নিবন্ধন করতে পারবেন না, স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের কারিগরি সহায়তা দিয়ে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করবেন। তবে সরকারি ছুটির দিনে টিকাদান বন্ধ থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘নিবন্ধন কিভাবে আরো বাড়ানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের পরিকল্পনা চলছে। দু-তিন দিনের মধ্যে নিবন্ধন অনেক সহজ হবে এবং গতিও বাড়বে। নিবন্ধন নিয়ে সংকট থাকবে না বলেই আশা করি। গতকাল বিকেল পর্যন্ত নিবন্ধন ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে।’
টিকা নেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা যত বাড়বে, ভয় তত কাটবে। টিকায় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবেই। আমি নিজে টিকা নিয়েছি, দুই দিন হাতে ব্যথা ছিল, পরে সেরে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রথম ডোজে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। দ্বিতীয় ডোজে কিছুটা বেশি হতে পারে। সেটাও স্বাভাবিক। আগে থেকে এই ধারণা রাখতে হবে। তাহলে ভয় কেটে যাবে।’