Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
করোনার প্রভাবে কামার পল্লীর কর্মীরা খুবই কস্টে আছেন

করোনার প্রভাবে কামার পল্লীর কর্মীরা খুবই কস্টে আছেন

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীর দত্তবাড়ির মোড়ের ষাটোর্ধ উত্তম কর্মকার। বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে পড়ন্ত বিকালে চোখে মুখে ক্লান্তি নিয়ে এক হাতে হাফরের চেইন টানছেন অন্য হাতে হাতুড়ি দিয়ে কাঁচা লোহা পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, ছুরি, চাপাতি, বটি, ধামা সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। কাজের ফাঁকে আলাপ হয় প্রতিবেদকের সাথে। অত্যন্ত গোমরা মুখ করে জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ পেশায় বিগত ৪০ বছর ধরে কাজ করছেন। এত বছর দোকানের আয়ে ভালোই চলছিল সংসার। বিশেষ করে প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় চরম ব্যস্ততায় দিন কাটতো তাদের। করোনার প্রভাবে গতবছর থেকে খুব বাজে সময় যাচ্ছে। চরম আর্থিক অনটনে ভোগছেন জেলার প্রায় তিন শতাধিক কামার। এবার নোয়াখালীতে প্রয় একমাস লকডাউন থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। আগের মত নেই কর্মব্যস্ততা। অভাব অনটনে কাটছে তাদের দিনকাল। অথচ দুই বছর আগেও এ সময় কামার পাড়ায় জমজমাট দা, ছুরি, বটি বিক্রি ও সান দেয়ার ধুম ছিল।

একই রকম অভিযোগ মাইজদী বাজারের রতন কর্মকারের। তিনি জানান, প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ এ পেশায় থাকলেও এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি কখনো। গতবছর থেকে আয় রোজগার নেই বললে চলে। কাজের চাপ তেমন একটা নেই। মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে মানুষের মধ্যে তেমন কর্মব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে না। করোনা সংক্রমনের পূর্বে ঈদের আগের দিনগুলোতে যে আয় রোজগার হত সেগুলো নিয়ে বছর পার করে দেয়া যেত। আর এখন তার এক তৃতীয়াংশ ও আয় হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা যারা পৈত্রিক পেশাকে আকঁড়ে ধরে আছি সবাই খুব কষ্টে আছি। বিভিন্ন স্থান থেকে কয়লা সংগ্রহ করে সকাল থেকেই কাজ শুরু হয় রাত অবধি। শারীরিক ও কায়িক পরিশ্রম করে লোহার যে সমস্ত জিনিস তৈরি করি তা বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে লাভ হয় খুব সামান্য। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর।

তবে ভিন্ন রকম অভিযোগ জানিয়েছেন দত্তেরহাটের কর্মকার উজ্জ্বল দাশ। তিনি জানান, নোয়াখালীর প্রধান শহর মাইজদী ও তার আশেপাশে ২০ থেকে ২৫ টি কামারের দোকান রয়েছে। শহরের ফোরলেনের কাজ শুরু হওয়ায় এগুলোর অধিকাংশ দোকানঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। নতুন করে কোথাও ঘর ও ভাড়া পাচ্ছেন না তারা। ফলে রাস্তার ধারে তাবু টানিয়েই কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

জেলার বিভিন্ন কামারপল্লীর কামারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারা দেশেই ক্ষুদ্র লৌহজাত শিল্পের উপর নির্ভরশীল পেশাদার কামার সম্প্রদায়। কাঁচা লোহা ও উৎপাদনের উপকরন সমূহের মূল্য বৃদ্বি,উৎপাদিত পন্যের মূল্য হ্রাস, ইস্পাত নির্মিত মেশিনে তৈরি জিনিস পত্রের সঙ্গে অসম প্রতিযোগীতা এবং অর্থাভাব সহ নানা প্রতিকুল পরিস্থিতির কারনে কামারশালা গুলো বন্ধ হতে যাচ্ছে। ফলে পৈতিক পেশায় নিয়োজিত কামাররা চরম বিপাকে পড়েছে। এতে বাধ্য হয়ে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। আবার যারা আকঁড়ে ধরে আছে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

আক্ষেপের সুরে মাইজদী বাজারের কর্মকার স্বপন বলেন, আমাদের কামার সম্প্রদায় কে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা ও ক্ষুদ্র লোহজাত জিনিস পত্র তৈরি করতে ও এই আদি শিল্প কে টিকিয়ে রাখতে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সহজ শর্তে ঋন দিতে ও সরকারের সহযোগীতা করতে হবে। তবেই আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারবো।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply