অনলাইন ডেস্কঃ
বিশ্বের যেখানেই করোনাভাইরাসের টিকার উদ্ভাবন সফল হবে, সেখান থেকেই সেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সরকার টিকা সংগ্রহের জন্য অর্থও বরাদ্দ রেখেছে। দেশের মানুষকে করোনা থেকে মুক্ত করার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন দেশ গবেষণা করছে। সব দেশেই আমরা আবেদন দিয়ে রেখেছি। এ জন্য টাকাও বরাদ্দ করে রেখেছি। যেখান থেকে আগে পাওয়া যাবে, সেখান থেকে আমরা নিব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে। কিন্তু তা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ল। এতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছি। তার পরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে। যেখানেই আবিষ্কার হোক, দেশের মানুষের জন্য তা সংগ্রহ করতে পারব। এ বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন।’
করোনা সংকট মোকাবেলায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেন এই দুর্যোগের সময়টা পার করতে পারি। কারণ করোনা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু সারা বিশ্বকে একেবারে স্থবির করে দিয়েছে। বাংলাদেশে যখন এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবাই এটি মোকাবেলায় একযোগে কাজ করেছে। প্রশাসন ও আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। যত দূর সম্ভব আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’
করোনাকালে চিকিৎসাব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা যাতে দিতে পারি তার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত, চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়সহ সব ব্যবস্থা নিয়েছি। এ জন্য পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। আমরা টাকা পয়সার দিকে তাকাইনি। এখানে হয়তো কেউ খুঁজে খুঁজে দুর্নীতি দেখতে পারেন। যে মুহূর্তে এ ধরনের একটি দুর্যোগ মোকাবেলার চিন্তা করতে হয়েছিল, তখন টাকা পয়সা কী হবে, কত খরচ হলো, কতটুকু সিস্টেম লস, তা বিবেচ্য ছিল না। আমাদের বিবেচ্য ছিল মানুষকে বাঁচানো। কিভাবে মানুষকে রক্ষা করব সেই ব্যবস্থাটা নেওয়ার চিন্তা ছিল। আর সেটা করেছি বলেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে এখনো বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের দেশের মতো ঘন বসতির দেশে এই কাজগুলো করা অত্যন্ত কঠিন।’
অপরাধে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না সরকার : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের সমালোচনার আগে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সমালোচনা করব। কিন্তু যারা কাজ করে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে। মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশকে আগে ডাকে। এমন কিছু না করা যাতে তারা ভয়ে ভীত হয়, তাদের কাজের উৎসাহটা নষ্ট না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু হয়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মীর লাশ পাওয়া যায়নি। তার পরে খালেদা জিয়ার আমলে একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো। আমরা এর ধারাবাহিকতা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমাদের মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কথামতো কাজ করে যাচ্ছে। তারা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটা করছে। সেগুলো করতে গিয়ে যদি কিছু দুর্ঘটনা ঘটে, এটা খুব অস্বাভাবিক নয়, ঘটে। তবে আমরা অপরাধে জড়িত কাউকে ছেড়ে দিচ্ছি না। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
নারায়ণগঞ্জে মসজিদ নির্মাণে নীতিমালা মানা হয়নি : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদ নির্মাণে কোনো নীতিমালা মানা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে এমন একটি জায়গায়, যেখানে গ্যাসের লাইন ছিল। ওই ভবনের কোনো অনুমোদন ছিল না। জায়গাটাও কোনো মসজিদ কমিটির না। এভাবে অননুমোদিত, অপরিকল্পিতভাবে করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে গেল, কতগুলো জীবন ঝরে গেল। ভবিষ্যতে কেউ যদি কোনো স্থাপনা করেন অন্তত নিয়ম নীতিমালা মেনে করবেন। যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনায় আর পড়তে না হয়।’ মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন তিনি।
করোনাকালে এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ : করোনাকালের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২১টি প্যাকেজে এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তা জিডিপির ৪.০৩ শতাংশ। এর বাইরেও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিশেষ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। প্রতিটি মসজিদ-মাদরাসায় টাকা পাঠিয়েছি। সরকারের প্রণোদনার বাইরেও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কোনো মানুষ যেন কষ্টে না থাকে। অর্থনীতির চাকাটা যাতে গতিশীল থাকে, আর সাধারণ মানুষ যেন কষ্ট না পায়, তার জন্য এই ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি।’
শিক্ষার্থীদের এক হাজার টাকা করে দেব : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু করোনাভাইরাসে সবার জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে, এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিক্ষার্থীদের আমরা এক হাজার করে টাকা দেব। যাতে করে তাদের কাপড়-চোপড়, টিফিন বক্স, তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোনো সংকটের সময় পিছিয়ে থাকতে আমরা পারব না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সংকট মোকাবেলা করব। অর্থনীতির চাকা সচল রাখব। এটাই আমাদের সরকারের নীতি।’