আকরামুজ্জামান আরিফ কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : নানা ঘটনায় প্রকল্প পাওয়ার প্রায় এক যুগ পরও সচল করা যায়নি মেডিক্যাল ক্যাম্পাস। মাগুরা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, নির্মাণকাজ চলছে। তবে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব পড়ে আছে। এটা এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সমাধান হবে।বহুল আলোচিত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নির্মাণকাজ কার্যত থমকে আছে। কবে নাগাদ কাজে গতি ফিরবে, কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। কলেজটির নির্মাণকাজে অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। তারই সুবাদে বারবার প্রকল্পটির মেয়াদ ও অর্থ বৃদ্ধির বিষয়ে তদন্ত চলছে।তিন মাস আগে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি মাঠের তদন্ত শেষ করেছে। এখন বিশ্লেষণ এবং রিপোর্ট লেখার কাজ চলছে। নানা ঘটনায় প্রকল্প পাওয়ার প্রায় এক যুগ পরও সচল করা যায়নি মেডিক্যাল ক্যাম্পাস।তদন্ত কমিটির প্রধান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘তদন্ত আমরা করে এসেছি, এখন রিপোর্ট লেখা চলছে। কমিটিতে আমি ছাড়া পরিকল্পনা কমিশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের লোকও আছে। কমিটির সবাই বসে আমরা বিশ্লেষণ করছি। আমরা মূলত দেখছি কীভাবে এত দিন কাজ এগিয়েছে।থকুষ্টিয়া গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মাগুরা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, মেডিক্যালের নির্মাণকাজ চলছে। তবে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব পড়ে আছে। এটা এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সমাধান হবে। একনেকে উঠবে আবার। এটা পাস হয়ে গেলেই আবার পুরোদমে কাজ শুরু হবে।নির্মাণাধীন কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের সুপারভাইজার অফিসার মানিক লাল দাস। তিনি গণপূর্তের যশোর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। টেলিফোনে মানিক জানালেন তদন্ত রিপোর্টের সঙ্গে কাজের কোনো সম্পর্ক নেই।আমরা কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলে রেখেছি, নির্মাণকাজ চালু রাখার জন্য। যে ঠিকাদার যে কাজ করছেন তা চালাবেন।থইলেক্ট্রো-ম্যাকানিক্যাল গ্রুপের ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার বাকী আছে। এর মধ্যে ২৩টি লিফট, সাব-স্টেশন, জেনারেটর, ওভারহেড লাইন এই গ্রুপের কাজের অন্যতম।তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মানিক লাল দাস বলেন, ২০১১ সালের প্রকল্পটি পাস হয় ২০০৮-এর শিডিউলে। তখনই উচিত ছিল গণপূর্তের কর্মকর্তাদের টেন্ডারে না গিয়ে শিডিউল রেট পরিবর্তন করে রিভিশন পাস করে নেয়া। কিন্তু তা না করে ২০০৮ সালের মূল্যে ২০১২ সালে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা শুরু হয়। পরে ২০১৮ সালেও একইভাবে রিভিশন পাস হয়। বারবারই পূর্বের প্রাক্কলন মোতাবেক প্রকল্প পাস হওয়ায় কাজ করতে গিয়ে অর্থে পোষায়নি।২০১২ সালের ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভায় ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর সর্বশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরে সংশোধিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭৪২ কোটি টাকা।কিন্তু ২০২০ সালের ১২ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়, মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। গত ৫ জানুয়ারি সেই প্রস্তাব যায় একনেকে। অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী তা বাতিল করেন ও তদন্তের নির্দেশ দেন।তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মানিক লাল দাস বলেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় রিভিশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ২০১৪ সালের শিডিউলে রিভিশন পাস হয় ২০১৮ সালে। এ বছরে আরেকটি রিভিশন দিতে গেলে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই আটকে আছে সব। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিলে পরে রিভিশন পাস হবে। তখন আবার টেন্ডার হবে।৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০১১ সালে কুষ্টিয়া শহরে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ম্যাটস) ভবনে অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরু হয় কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের। জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে চলছে এর পাঠদান।Attachments area