কক্সবাজার প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কক্সবাজার আগে খুবই অবহেলিত ছিল। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই কক্সবাজারসহ পুরো দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। লবণ বোর্ড গঠন করা হয়েছে ।যাতে রপ্তানি করা যায়। কক্সবাজারে বিমান বন্দর ও রেল লাইন করা হচ্ছে। এতে যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হবে। মৎস্য চাষীদের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে যেন বিদেশী পর্যটক নির্বিঘ্নে আসতে পারে তাঁর জন্য সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ক্রিকেট ও ফুটবলের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স হচ্ছে। আমার বাবা কক্সবাজারকে ভালবাসতেন, তাই এখানে সবকিছু দিয়েছি। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দরসহ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। মহেশখালী সিঙ্গাপুর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ হবে। যাতে এখানকার সন্তানেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) বিকালে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক শেখ কামাল স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জামাত-বিএনপি আগুন সন্ত্রাস ছাড়া এদেশের মানুষকে কিছু দেয়নি। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাত করেছে। তাঁর ছেলে তারেক রহমান দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সে সাজাপ্রাপ্ত আসামী।আমরা শান্তির জন্য র্যালী করছিলাম। সেই র্যালীতে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে।এতে আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হয়। বিএনপি-জামাত জীবন্ত মানুষকে
পুড়িয়ে মেরেছে। দেশের মানুষের সম্পদ লুটপাট করে খেয়েছে। তাঁরা স্কুল-কলেজও হাসপাতাল ধ্বংস করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সবই করেছে দেশের কল্যাণে। কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন,নানা কারণে আন্তর্জাতিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে।তাই খাদ্য উৎপাদনে যার যতটুকু জমি আছে চাষ করবেন।আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নাই। এ দেশের মানুষের জন্য আমার পরিবার জীবন দিয়েছে। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে এই বাংলাদেশ অনেক আগে উন্নত রাষ্ট্র হতো। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে এখন দেশের মানুষের জন্য সবকিছু করছি। এই বাংলাদেশের মানুষ আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় থাকবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। এখানে কেউ ভূমি ও জমিহীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা হবে। তাই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার আসিবো ফিরে কক্সবাজার সৈকত তীরে।
জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অপেক্ষা করুন, খেলা হবে। ফুটবলের মাঠে খেলা হচ্ছে, সামনে খেলা। রাজনীতির মাঠে খেলা হবে, নির্বাচনে খেলা হবে। আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা হবে ভোট চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। বিএনপির মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,ফখরুল সাহেব বাড়াবাড়ি করবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরে গেছে। বিএনপি থেকে সাবধান,তারেক রহমান থেকে সাবধান।জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও
সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ,প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংসদ সদস্য জাফর আলমসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সঞ্চালনায় সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম।এর আগে ইনানীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত আন্তর্জাতিক ‘ফ্লিট রিভিউ’উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৮টিদেশের ৪৩টি যুদ্ধ জাহাজ, দুটি বিএন এমপিএ এবং ৪টি বিএন হেলিকপ্টার অংশ নিয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ইনানিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী।বিকেল সাড়ে ৩টায় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ’ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন তিনি।
এদিকে সকাল থেকে জনসভাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক সভাস্থলে আসেন। কক্সবাজারের সবগুলো সংসদীয় আসনের সদস্যরা তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে বাসে ও ট্রাকে করে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এসেছেন। নারী সদস্যরাও ছিল এই দলে।
সমাবেশে যোগ দিতে আসা অনেকে ব্যাগে করে দুপুরের খাবারও নিয়ে আসে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুসারীদের ছবি সম্বলিত টি-শার্ট দেখা
গেছে অনেকের গায়ে। আবার অনেকের হাতে শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও দেখা গেছে।