বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনা সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) কার্যালয়ের নাজির
মনিরুজ্জামানকে ঘুষ না দেয়ায় রাতের আধাঁরে উচ্ছেদের নামে শহরের দক্ষিণ
লাকুরতলা গ্রামের মোর্শেদা ওরফে রিনা নামে এক মহিলার ঘর ভাংচুর ও তাকে মারধর
করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দু’ জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন ঘর
মালিক মোর্শেদা ওরফে রিনা ও তার ৪ বছরের প্রতিবন্ধী শিশু নাতি আসোয়াদ।
গুরুত্বর আহত রিনাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার
ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আহত মোর্শেদা ওরফে রিনার স্বামী দুলাল প্রতিবেদককে জানান, আমরা দক্ষিণ লাকুরতলা গ্রামে এস এ খতিয়ান নং-১৯৯০ এবং দাগ নং ৮৪৯০ রেকর্ডীয় জমিতে ঘর উঠিয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছি। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টির কারণে ঘরে আসবাপত্র নষ্ট হয়। তাই ঘরটি সংস্কার করতে চাইলে সরকারি জমি দাবি করে সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) কার্যালয়ের নাজির মনিরুজ্জামান ৫০ হাজার
টাকা ঘুষ দাবি করে। আমি ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকার করি।
গত সোমবার (৯-নভেম্বর) রাত পৌনে ৮টায় এসিল্যান্ড) অফিসের
নাজির মনিরুজ্জামানের নির্দেশে ১৫/২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ সক্রিয় সশস্র দল
হাতুড়ি নিয়ে ঘরে পিটাতে থাকে । এ সময় আমার স্ত্রী রিনা বাধা দিলে তাকে
হাতুড়ি দিয়ে পিটাতে থাকে ।এ সময় তার আত্নচিৎকারে স্থানীয়রা আসলে
এসিল্যান্ড অফিস থেকে আসা হামলাকারিরা পালাতে থাকে । প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা
তাৎক্ষণিক ভাবে বরগুনার জেলা প্রশাসককে জানালে ঘটনা স্থলে উপজেলা নির্বাহী
অফিসার মাসুমা আক্তার ও এসিল্যান্ড নিজাম উদ্দিন আসেন। এ সময় এসিল্যান্ড
অফিস থেকে আসা হামলাকারি জিতেন নামে একজনকে স্থানীয়রা উপজেলা
নির্বাহী অফিসার মাসুমা আক্তার এর হাতে তুলে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রাকিব ও অন্যরা জানান, এসিল্যান্ড অফিসের নাজির
মনিরুজ্জামানের নের্তৃত্বে সার্ভেয়ার মোশারেফ, তহসিলদার রনিসহ ১৫/২০ জনের
একটি সংঘবদ্ধ সক্রিয় সশস্র দল বড় বড় হাতুড়ি দিয়ে ঘর ভাংচুর করতে
থাকে । কোন নোটিশ ছাড়াই পরিকল্পিত ভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘরে নারী ও
শিশুদের ঘুমন্ত অবস্থায় হামলা করে। এ সময় প্রতিবন্ধী শিশু ও নারীর আত্নচিৎকারে
স্থানীয় লোকজন আসলে এসিল্যান্ড অফিস থেকে আসা হামলাকারির দল পালাতে
থাকে। পরে এক জন হামলাকারিকে আটকিয়ে রেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার
এর হাতে তুলে দেয় স্থানীয়রা । পরে তাকে আটক করেছে না ছেড়ে দিয়েছে আমরা
জানিনা। বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসককে জানালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও
এসিল্যান্ড এবং পুলিশ ঘটনা স্থলে আসেন। এসিল্যান্ড তার অফিসে সকালে ঘর
মালিককে দেখা করতে বলেন। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে। তবে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে
এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
এসিল্যান্ড অফিসের নাজির মনিরুজ্জামান ঘুষ টাকা চাওয়ার কথা
অস্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, আমি লোক পাঠিয়ে ছিলাম , তবে এক সঙ্গে
এত লোক পাঠানো , হামলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে
পারেননি , উল্টো প্রতিবেদকে চায়ের দাওয়াত দেন নাজির মনিরুজ্জামান।
বরগুনার সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মো. নিজাম উদ্দিন
মুঠোফোনে বলেন ওখানে নতুন করে ঘর তুলতে ছিল, ঘর উঠানো বাঁধা দিতে
সংশ্লিষ্ট তহশিলদার যায় তার সাথে আমার অফিসের লোকজন যায়। তবে এক সঙ্গে
হাতুরি নিয়ে এত লোক যাওয়ার প্রশ্নে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।এসিল্যান্ড
নাজির মনিরুজ্জামানের ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়া ও অফিসের তিন কর্মচারী
হাসপাতালে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান ওই ঘর ভাংচুর এর
ঘটনায় তারা আহত হয়েছে। আর নাজিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুমা আক্তার মুঠোফোনে
জানান,আমি ওখানে উপস্থিত ছিলাম না , অফিসের ৩ জন লোক আহত হয়েছে
এমন সংবাদ পেয়ে ওখানে যাই । অফিসে আসেন ফোনে বলা যাবে না।
এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ মুঠোফোনে বলেন
বিষয়টি ইউএনও কে জানান।