আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ এই নির্বাচনে কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে দলের যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতো ভোট করতে পারবেন। দলের নেতাকর্মীরা যাঁর যাঁর পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে পারবেন।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত থাকা একটি সূত্র জানিয়েছে। দলীয় বিভেদ এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর এটিই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রথম বৈঠক।
দুরভিসন্ধি করে পণ্য মজুদ করলে শাস্তি : প্রধানমন্ত্রী
বৈঠক শুরুর আগে দেওয়া সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়ে যাওয়াকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের একটি গোষ্ঠী অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে। কিন্তু এই বাংলাদেশে আর কোনো দিন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হতে দেওয়া হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
কারসাজি করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকারীদের খুঁজে বের করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যুদ্ধ-অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। তবে মানুষের কষ্ট কমাতে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, অস্বাভাবিকভাবে ও দুরভিসন্ধি করে যারা পণ্য মজুদ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
প্রয়োজনে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেশে আর কখনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। বাজার নিয়ে কেউ যেন কোনো খেলা খেলতে না পারে, সে জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছি। এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। এখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার।’
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট হতে দেবে না, ভোটারদের যেতে দেবে না—এমন হুমকির পর, নানা বাধা-বিপত্তির পরও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে। দল ক্ষমতায় থাকলেও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, সেটা এবার প্রমাণিত হয়েছে। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা (বিএনপি) অন্য পথে হাঁটছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির শাসনামলে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা পেয়েছে মাত্র ৩০ আসন। এর পর থেকে তারা দেশজুড়ে সহিংসতা, অগ্নিসন্ত্রাস চালায়। নির্বাচন করবে না, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু এ দেশের মানুষ নির্বাচন গ্রহণ করেছে। অথচ কিছু আঁতেল ভোট নিয়ে ধূম্রজাল তৈরির চেষ্টা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা, কেন বাড়ল, সেটাই প্রশ্ন। কেউ যদি অবৈধভাবে মজুদ করে থাকে, তাকে সাজা পেতে হবে।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে উপজেলা নির্বাচন, নির্বাচন কিভাবে করব, সেটা নিয়ে সভায় আলোচনা হবে। দেশের একটি গোষ্ঠী অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে। কিন্তু এই বাংলাদেশে আর কোনো দিন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হতে দেওয়া হবে না। অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।’