রাজধানীর আগারগাঁওয়ের অফিসপাড়ায় জনবহুল আবাসিক এলাকা করার উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে চার হাজার ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শেরেবাংলানগরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে ৪২টি ১০ তলা ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এসব ভবনে সরকারি কর্মকর্তাদের এক হাজার ৫১২টি পরিবার থাকবে, যা আগারগাঁওয়ের অফিসপাড়ায় বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পরিকল্পনা কমিশনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই এলাকায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু অফিস ভবন গড়ে উঠেছে। আরো কিছু অফিস ভবন নির্মাণের কাজ চলমান। এখানে এত বড় আবাসন প্রকল্প করা হলে এই এলাকায় ট্রাফিকব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এক হাজার ৫০০ ফ্ল্যাট তৈরি হলে প্রতিদিন গাড়ির তিন হাজারের বেশি ট্রিপ তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া, নিজের অফিসে যাতায়াত—এসবের চাপ নেওয়ার অবস্থা এই এলাকার আছে কি না, সেটাও ভাবতে হবে। তাই এখানে না করে ঢাকার আশপাশেও করা যায় বলে তাঁদের মত।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটি এখানে করার বিষয়ে আরো ভাবতে বলেছি। এখানে আবাসন হবে, না অফিস হবে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আবাসন পূর্বাচলে বা অন্য কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু অফিস বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভালোভাবে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আবার কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আসবে।’
সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে, বর্তমানে কতগুলো প্রকল্প চলছে, ভবিষ্যতে কী পরিমাণ প্রকল্প নেওয়া হবে, এর বিপরীতে কী পরিমাণ চাহিদা আছে—এসবের একটা বিশদ পর্যালোচনার মাধ্যমে চাহিদা অ্যানালিসিস করতে হবে।
এ বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম শামসুল হক বলেন, ‘চারতলা ভিতের ওপর যেমন ২০ তলা ভবন করা যায় না, তেমনি আবাসন করলে সেখানকার মানুষের লোড বিদ্যমান সড়ক নিতে পারবে কি না, সেটা যাচাই করেই আবাসন করা উচিত।
আমরা ঢাকায় তো বিকেন্দ্রীকরণ করছিই না, ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার টেকসই প্রজেক্টও করছি না। বরং যারা যানজট দূর করবে, তারাই যানজটকে চিরস্থায়ী করার জন্য অপরিকল্পিত আবাসন করছে। তাই ভবন করার আগে পরিবেশ ও ট্রাফিকের ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা যাচাই করা দরকার।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সরকার বারবার ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বললেও সরকারের সংস্থাগুলোই সেই ঘোষণা মানছে না।
দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় কেন্দ্রীভূত নগরায়ণ আরো বাড়ছে। আগারগাঁওয়ে গাছপালা থাকার কারণে পরিবেশে ভারসাম্য রয়েছে, পরিবহনেরও একটা ভারসাম্য রয়েছে। যদি এই প্রকল্প নেওয়া হয়, তাহলে সেখানে চাপ অনেক বেড়ে যাবে, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে।
প্রকল্পের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রস্তাবনায় বলা হয়, ঢাকা শহরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা এক লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ এবং তাদের বসবাসের জন্য ১৩ হাজার ৫২টি ফ্ল্যাটের সংস্থান রয়েছে, যা মোট চাহিদার মাত্র ৮ শতাংশ এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি বাসা না পাওয়ার কারণে বেশি ভাড়া দিয়ে বেসরকারি বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাঁদের আর্থিক অসুবিধার মধ্যে ফেলছে। আবার অনেকে নিম্নমানের বাসায় বসবাস করছেন, যা তাঁদের জীবনযাত্রার মানকে ব্যাহত করছে।