অনলাইন ডেস্ক:
কুমিল্লার দেবীদ্বারে একটি প্রভাবশালী মহল চলমান খালের গতিরোধ ও ভরাটের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ ও গোরস্তান তৈরি করে যাচ্ছে। উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের বুড়িরপাড় পুরাতন বাজার সংলগ্ন সুবিল-বুড়িরপাড় খালের প্রবাহ বন্ধ হচ্ছে। এই খালটি রামপ্রসাদ খালের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ খালই কেউ না কেউ দখল করে গড়েছেন বসতবাড়ি।
কেউ বা একই সঙ্গে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দখল করেছেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থার এসএ, আরএস ও বিএস জরিপে যেখানে খাল দেখানো হয়েছে বাস্তবে সেখানে বহু আগেই ওই খালগুলো ভরাট করে দখল করে নেওয়া হয়েছে।
খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণ ও পুকুর খনন করে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। ড্রেজার মেশিন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা আমাদের পারিবারিক গোরস্তানের সংস্কার করছি। ভেকুর সাহায্যে গোরস্তানের মাটি কেটে খালের পাড় ভরাট করছি। পরবর্তী সময়ে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করে গোরস্তানটি ভরাট করব। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব জমির ওপর কবরস্থান সংস্কার করছি। লাশ আনা-নেওয়ার জন্য খালের ওপর সড়ক নির্মাণ করেছি সত্য, তবে সড়কের নিচে ৬ ইঞ্চি মাপের ৩টি পাইপ দিয়েছি পানি নিষ্কাশনের জন্য।
স্থানীয় বাসিন্দা জানান, উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের সুবিল গ্রামেই প্রায় ২০-২২ একর খাসজমি ছিল। এ এলাকার বড় বড় খাল ভরাট করে দখল, মার্কেট নির্মাণ, বাড়ি নির্মাণ ও সড়ক নির্মাণ এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
ওই এলাকার আরেকজন বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহেরের নেতৃত্বে বুড়িরপাড় গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রাম প্রাসাদ খালের মোহনাখ্যাত অংশের (সুন্দর আলীর বাড়ি থেকে রমিজ সরকারের বাড়ি পর্যন্ত) প্রায় এক হাজার পাঁচ শ ফুট খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ওই খালটি ভরাটের পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাকি খালগুলো ভাগাভাগি করে ব্যক্তিগত পুকুর ও মাছের খামার তৈরি করে নিজেদের ইচ্ছামতো ভোগ করে আসছেন।
প্রবীণ কৃষক বলেন, সুবিল, ওয়াহেদপুর, আব্দুল্লাহপুর ও বুড়িরপাড় গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় আটটি বড় খাল ছিল। যেগুলো খালখেকো, ভূমিখেকো, মাটিখেকো সিন্ডিকেটের কারণে মরে যাচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এ খালগুলোর সঙ্গে রামপ্রসাদ খালের এক নিবিড় সম্পর্ক ছিল। রামপ্রসাদ খালটি মরজরা নদী, বুড়ি নদী, গোমতী নদী, তিতাস নদী, মন্দবাগ নদীর সঙ্গে সংযোগ ছিল। এখনো ওই নদীগুলোর সঙ্গে কিছু কিছু খালের সংযোগ থাকলেও অধিকাংশ খাল প্রভাবশালীদের দখলে। ফলে পানির গতিধারা বিঘ্নিত হওয়ায় মৎস্যজীবীরা যেমন বেকার হয়ে পড়েছেন, তেমনি এলাকার সাধারণ মানুষ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পানিসংকটে ফসলি জমি এবং বীজতলাগুলোও প্রায় ধ্বংসের মুখে।
দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক উন-নবী তালুকদার বলেন, খাল বা খাসজমি অবৈধ দখলদারদের কাছে রাখার কোনো সুযোগ নাই।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, খাল ভরাট করে রাস্তা ও গোরস্তান নির্মাণের বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা যাচাইয়ের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন