Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

এক প্রতিষ্ঠানে তিন শিক্ষকের জাল নিবন্ধন সনদে চাকরি!

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মান্দায় কালিকাপুর চককালিকাপুর স্কুল এণ্ড কলেজে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদে তিন শিক্ষক চাকরি করছেন। অনেক আগে জাল সনদে প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি নিলেও বর্তমানে জাল সনদের বিষয়টি ফাঁস হয়েছে। সম্প্রতি এই তিন শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল বলে যাচাই প্রতিবেদন দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। একই সাথে জাল সনদধারী এ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে অধ্যক্ষকে।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, জাল সনদধারী এ শিক্ষকগণ ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তারা নিয়মিত এমপিও ভোগ করতেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনজন শিক্ষকের সনদ যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএতে পাঠানো হয়েছিল। গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দে তাদের সনদ যাচাই করে প্রতিবেদন দিয়েছে এনটিআরসিএ। এই প্রতিবেদনে তিন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

এনটিআরসিএ সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম স্যারের দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, শিক্ষক জাহানারা পিতাঃ নাসির উদ্দিন, ১০৭১৩৭৩৬ রোলঃ নম্বর ও ৭০০৮৯০৫ রেজিঃ নম্বরের যে সনদটি দাখিল করে চাকরি নিয়েছেন তার প্রকৃত মালিক, হাবিব মোঃ আব্দুল আওয়াল, পিতাঃ মজিবর রহমান। ৪র্থ নিবন্ধন পরিক্ষা, পরীক্ষার সাল ২০০৮, প্রাপ্ত নম্বর আবশ্যিক – ৪১ ও ঐচ্ছিক- ৪০। তার সনদটি জাল করে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। তিনি ২১ জুন ২০০৯ সালে নিয়োগ নিয়ে ১ মার্চ ২০১০ খ্রিস্টাব্দে এমপিওভুক্ত হন। এপর্যন্ত সে প্রায় সতেরো লক্ষ টাকা সরকারের কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্নস্যাৎ করেছেন। 

অন্য জন কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ পিতাঃ মোঃ সদর উদ্দিন সরদার, ৩য় নিবন্ধন পরীক্ষা, ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ। রোল নম্বর ২১১৮০৫৯৫ ও ৭০১৪০৬৮ রেজিঃ নম্বরের যে সনদটি দিয়ে চাকরি নিয়েছেন তা গোলক চন্দ্র রায় পিতাঃ মৃত খেমাচরন। প্রাপ্ত নম্বর আবশ্যিক-৫৯ ও ঐচ্ছিক-৪৫ নামের অপর এক প্রার্থীর। তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে নিয়োগ নিয়ে ১মে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়েছে। এপর্যন্ত সে প্রায় সাড়ে ষোল লক্ষ টাকা সরকারের কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্নস্যাৎ করেছেন। 

অন্য আরেক জন জীব বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক এনামুল হক, পিতাঃ আহম্মেদ আলী, ৪ র্থ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ। রোল নম্বর  ১১২১০৩৬৫ ও ৮০০০৬৩১৮ রেজিঃ নম্বরের যে নিবন্ধন সনদটি ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছেন তা অনুত্তীর্ণ। প্রাপ্ত নম্বর আবশ্যিক-৩৭ ও ঐচ্ছিক-৩৫।তিনি ২৮ ডিসেম্বর ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে নিয়োগ নিয়ে ১মে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়ে এপর্যন্ত প্রায় সাড়ে ষোল লক্ষ টাকা সরকারের কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্নস্যাৎ করেছেন।এনটিআরসিএর দেয়া সনদ যাচাই প্রতিবেদনে, জাল ও ভুয়া সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মান্দা থানায় মামলা রুজু করতে কালিকাপুর চককালিকাপুর স্কুল এণ্ড কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোহাম্মদ আব্দুল আলিম সাংবাদিককে জানান, আমি এখনো বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষের চিঠি হাতে পাইনি। তবে অনলাইন থেকে চিঠির কপি বের করে নিয়েছি। অফিসিয়াল ভাবে চিঠি হাতে পেলেই সরকারি নির্দেশমত মান্দা থানায় এ জাল নিবন্ধন সনদধারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবো। 

এ নিয়োগ ও জালসনদ পাওয়ার ব্যপারে জানার জন্য ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক জাহানারার মুঠোফোন থেকে ফোন দিলে একাধিকবার তার স্বামী ফোন রিসিভ করায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া যায়নি।  

অন্য শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদের কাছে জাল সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নিবন্ধন সনদ সঠিক। এ সনদের রোল নম্বর এনটিআরসিএ এর সাইটে আছে। দৈনিক শিক্ষা ডটকমের পক্ষ থেকে তার রোল নম্বর চাওয়া হলে তিনি ফোনে দিতে অস্বীকার করে বলেন, আমার সাথে দেখা করেন। আপনার রোল নম্বর নিতে হলে আপনার সাথে কেন দেখা করতে হবে? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

অপর জাল নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষক এনামুলের কাছে থেকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সনদ ঠিক আছে এবং ওয়েবসাইটে আছে। আপনার সনদের রোল নম্বর আমাকে দেন, দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে এভাবে রোল নম্বর চাইলে তিনি বলেন, আমার ৩/৪ টি সার্টিফিকেট নেটে আছে। আমি সব বিষয়ে নিবন্ধন করেছি, রোল নম্বর নিলে আপনি আমার সাথে দেখা করেন।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply