ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন নুর উদ্দিন। পড়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে। গ্রামের বাড়ি ফেনীর সদর উপজেলায়। ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে যাবেন বিদেশে।
তা-ই করেছেন তিনি। তবে যে উপায়ে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। দালাল বা কোনো জটিলতা ছাড়াই তিনি পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ায়। আর এটা সম্ভব হয়েছে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে।
অভিজ্ঞতা বর্ণনায় তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, “বিদেশযাত্রা মানেই বিড়ম্বনা। আগে এটাই জানতাম। কিন্তু বিদেশযাত্রায় আমার সব ধাপ সম্পন্ন করেছি ঘরে বসে এই অ্যাপে। যাওয়ার সকল প্রক্রিয়া অ্যাপেই দেওয়া ছিল।
আমার কাছে খুবই সহজ মনে হয়েছে। কোনো ধরনের জটিলতা ও দালালদের হয়রানির মুখোমুখি পড়তে হয়নি। যে তথ্য ও কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে আমার মুঠোফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছি। আমি এই অ্যাপের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত, করোনার সময়ও ভ্যাকসিন নিয়েছি ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ থেকে।” দেশ প্রযুক্তিতে এত দূর এগিয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
জটিলতা ছাড়াই স্বপ্ন সিঁড়িতে পা রেখেছেন তরিকুল ইসলাম নামের আরেক যুবক। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটে এসএসসি পরীক্ষার পর পড়ালেখা করতে পারেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের সন্ধান পান তিনি। সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করে অল্প সময়ে কোনো জটিলতা ছাড়াই চলে গেছেন বিদেশে। গেল সপ্তাহে আনন্দিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে লিখেছেন, “দেশে থাকা বন্ধু ও সহকর্মীরা কেউ বিদেশে আসতে চাইলে সরকার অনুমোদিত ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ তার জন্য যথেষ্ট হবে। এ অ্যাপ থেকে অবশ্যই উপকার পাবেন। সব ধরনের জটিলতা ছাড়াই বিদেশে আসতে পারবেন।”
এভাবে দেশের ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ এই অ্যাপ থেকে সুবিধা নিচ্ছে। দালালমুক্ত অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখছে আমি প্রবাসী অ্যাপ। করোনা মহামারিতে ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এই অ্যাপ। প্রায় ১৫ লাখেরও বেশি নিবন্ধন হয়েছে এই অ্যাপে। এখন এনালগ পদ্ধতিতে বিদেশ সেবায় আর কাউকে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সহজেই এ প্রযুক্তির দ্বার উন্মুক্ত হওয়ায় উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে বিদেশগামীদের মাঝে। মাত্র দুই বছরে ঝামেলামুক্ত সেবা পেয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
এ বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহিদুল আলম এনডিসি বলেন, ‘আমাদের সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে। এটি আর খুব বেশি দূরে নয়, কাগজে-কলমে আর কাজ হবে না। অভিবাসনের সব কাজ হচ্ছে অনলাইনে। আমরা ডিজিটাল ও তারুণ্যের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোচ্ছি। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কাজের গতি তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে, ভোগান্তি কমেছে।’
এ বিষয়ে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাংলা ট্র্যাক গ্রুপের পরিচালক নামির আহমেদ বলেন, প্রবাসী সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা ছাড়াও এই অ্যাপ দিয়ে যেকেউ নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস, মেডিক্যাল সেন্টার, জেলা জনশক্তি অফিস এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। অ্যাপের ব্যবহারকারীরা ব্র্যাকের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ এবং ব্র্যাক পরিচালিত ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তির সুযোগও পাচ্ছেন, এতে অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। অ্যাপটিতে রয়েছে বিদেশে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জার্নি ম্যাপ, বিদেশযাত্রার সকল ধাপ সম্মিলিত চেক-লিস্ট, সকল ধরনের প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংরক্ষণের সুযোগ।