অনলাইন ডেস্ক:
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সবাইকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘এই স্বাধীনতা এক দিনে বা হঠাৎ করে আসেনি। অনেক ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাই স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সবাইকে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সব ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।’
গতকাল শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আয়োজনে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও তাঁর প্রিয় স্বদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী একসঙ্গে উদযাপন করছি। বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসে এ এক অপূর্ব মিলন ক্ষণ।’
বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। এই অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে উঠবে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।’
‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’—এই থিমে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীর এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে জানা ও বোঝার জন্য জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এই উদযাপনকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্ম এবং তাঁর নীতি-আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলা ছাড়া বিদেশি বিভিন্ন ভাষায়ও যাতে বঙ্গবন্ধুকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যথাযথভাবে তুলে ধরা যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গবেষক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মর্যাদাপূর্ণ নিষ্পত্তি প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু অনুসৃত ‘কারো সাথে বৈরিতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব’ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কূটনৈতিক অঙ্গনে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। আশা করি, অচিরেই অমীমাংসিত অন্যান্য ইস্যুরও সুষ্ঠু ও মর্যাদাপূর্ণ নিষ্পত্তি হবে। আমি আশা করি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেও ভারতসহ বিশ্বসম্প্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন ও সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। আমি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছি মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত কিভাবে আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। মিত্রবাহিনীর অনেক সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মহানুভবতা ও মানবিকতার ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা ও সমর্থনের কথা বাংলাদেশের জনগণ সব সময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি নিজে এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ভারত সরকার ও জনগণকে আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’