পাট, কেনাফ ও আঁশজাতীয় পণ্য উৎপাদনে সব সময়ই ভারতের পরেই অবস্থান বাংলাদেশের। কিন্তু গত চার অর্থবছরের ব্যবধানে ভারতের পাটের উৎপাদন প্রায় ৩৭ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশের উৎপাদন খুব বেশি নেতিবাচক ধারায় না থাকায় ভারতকে টপকে বিশ্বের শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী দেশ এখন বাংলাদেশ। বৈশ্বিক পাট উৎপাদনের ৫৮ শতাংশ জোগানদাতা বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাট, কেনাফ ও আঁশজাতীয় পণ্যের ৫৩ শতাংশের জোগানদাতা বাংলাদেশ।
পাট ও পাটের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ স্ট্যাটিস্টিক্যাল বুলেটিনের তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারতের পাটের উৎপাদন ছিল ১৬ লাখ ৫৬ হাজার টন আর বাংলাদেশের ছিল ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টন। কিন্তু গত চার অর্থবছরে ভারতের পাট উৎপাদন ধারাবাহিকভাবেই কমছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে পাটের উৎপাদন ৯ লাখ ৮০ হাজার টন। অন্যদিকে বাংলাদেশের উৎপাদন কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের উৎপাদন ছিল ১৪ লাখ আট হাজার টন। এর মাধ্যমে ভারতকে টপকে শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী এখন বাংলাদেশ।
জানা গেছে, প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে সোনালি আঁশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তুলে ধরতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় অন্যান্য বছরের মতো এবারও ৬ মার্চ ‘জাতীয় পাট দিবস ২০২৩’ উদযাপন করছে। এবারের জাতীয় পাট দিবসের প্রতিপাদ্য ‘পাটশিল্পের অবদান, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। পাট খাতে অবদান রাখার জন্য এ বছর পাট দিবসে ১১টি ক্যাটাগরিতে ১১ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পাট সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাতটি শুভেচ্ছা স্মারক দেওয়া করা হবে। দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এবং পাটসমৃদ্ধ ফরিদপুর জেলায় পাট ও পাটজাতপণ্য প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১২ থেকে ১৬ মার্চ শিল্পকলা একাডেমিতে পাঁচ দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, এযাবৎকালের সর্বোচ্চে পাটের উৎপাদন হয়েছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। সে সময় মোট এক লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ একর জমিতে প্রায় ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার বেল পাট উৎপাদন হয়েছিল। তবে কয়েক বছর ধরেই তা কমতির দিকে ছিল। গত অর্থবছরে পাটের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে। তবে পাটের উৎপাদন বাড়াতে সরকার বীজের সংকট মেটানোয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের পাটবীজ ব্যবহারের মাধ্যমে অল্প জমিতে অধিক পাট উৎপাদন, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে পাটবীজ উৎপাদনে চাষিদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাট চাষের আধুনিক কলাকৌশল সম্পর্কে পাটচাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে ৪৬টি জেলার ২৩০টি উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মানসম্মত পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে পাঁচ বছরের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। আশা করি বাংলাদেশ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে। প্রয়োজনীয় পাটবীজ সংগ্রহে আমদানি নির্ভরতা আর থাকবে না।’
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন