অনলাইন ডেস্কঃপরবর্তী উন্নয়নের ধাপে যেতে মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা বাংলাদেশের উন্নয়নের আগামী দিনের অন্যতম ভবিষ্যত। এ জন্য শুধু কারিগরি শিক্ষার আধুনিকায়ন নয়, সরকারের কাছে অংশীদারিমূলক সংস্কার কমিটি তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত ‘যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থানীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সম্মেলনটির আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম ও এসডো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউসেপ বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি এ মতিন চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব মো. রুহুল আমিন, ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান প্রমুখ।
সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকারেরর পক্ষ থেকে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষার শুধু আধুনিকায়ন নয়, সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, অংশীদারিমূলক সংস্কার কমিটি তৈরির। আশা করব, দ্রুত আধুনিক, দক্ষ, রূপান্তরমূলক কর্মপরিকল্পনা তৈরির উদ্যোগ নেবে সরকার।
২৫-২৬ বাজেটে অর্থ সংস্থান ও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবে সরকার। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো যেন সেটার সুযোগ পায়।
সিপিডির সম্মানীয় আরেক ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কেমন হবে, তা নির্ভর করবে শিক্ষার্থীদের কেমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার ওপর। বাজার চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন বলেন, মিডলম্যানদের দৌরাত্ম্যের কারণে অভিবাসন ব্যয় বাড়ছে। তাদেরকে আইনি কাঠামোতে আনতে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, যা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তের প্রক্রিয়া চলছে। ডিসেম্বরে একটি প্ল্যাটফরম করা হবে। চাকরিদাতাদের চাহিদা ও বিদেশগমনে ইচ্ছুকদের সব তথ্য সেখানে উন্মুক্ত থাকবে।
সম্মেলনে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর একটি সামাজিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
যেখানে বলা হয়, মোট বাজেটের অনুপাতে কারিগরি শিক্ষার বাজেট বরাদ্দ খুবই কম। এ জন্য জাতীয় বাজেটে কারিগরি শিক্ষায় আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়নে বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগের অভাব রয়েছে। উত্তরণে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্ননয়নে বেশ কিছু নীতি সহায়তার সুপারিশ করে সিপিডি।
এর আগে ‘যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থানীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান।গবেষণা প্রতিবেদনটিতে সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কারিগরি শিক্ষা-প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিবাবকদের মতামত নেওয়া হয়েছে। ৬০০ জন বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, ৬০ জন শিক্ষক-প্রশিক্ষক, ২৪০ জন অভিবাবক, ৭৫ জন সরকারি কর্মকর্তা, বিষয় বিশেষজ্ঞ ও চাকরিদাতাদের ৭৫ জন মতামত নেওয়া হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৬৭ শতাংশ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ভালো। তবে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের ১৩ শতাংশ শিক্ষার মানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। সাবেক শিক্ষার্থীদের ৬৩ শতাংশের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকার নিচে।
প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রাংশ নেই, ল্যাবের সংখ্যা অপ্রতুল। পঞ্চগড় ও সুনামগঞ্জে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট না থাকায় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা লাভের সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পূণার্ঙ্গ ডাটাবেইস না থাকায় অসাধু শিক্ষার্থীরা ভাতার একাধিক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত হয়।
এতে আরো জানানো হয়, প্রতিবছর কারিগরি শিক্ষায় মাধ্যমিক পর্যায়ে সমাপনকারী মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর হার কমেছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ তাদের ঘৃণার চোখে দেখে।
প্রতিবেদনে শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যক্রমের বাজেট বাস্তবায়নের হার বাড়ানো, চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অংশ গ্রহণ বাড়াতে প্রণোদনা বাড়ানো, প্রশিক্ষণের প্রচার বাড়ানো, নিড বেজড ট্রেনিং বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।