Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ একটি অসংক্রামক নীরব ঘাতক। বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ ও রক্তনালির সমস্যাজনিত রোগ। আর এই সমস্যার পিছনে প্রধানত দায়ী হলো উচ্চ রক্তচাপ। বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ ব্যক্তিই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। হৃদপিণ্ড বিকল, কিডনি বিকল আর স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ এই উচ্চ রক্তচাপ। কিন্তু চিন্তার বিষয় এই যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ রোগীই জানেন না যে তিনি এ রোগে ভুগছেন। এর প্রধান কারণ হল সচেতনতার অভাব। এছাড়া প্রথম দিকে বেশির ভাগ রোগীরই উচ্চ রক্তচাপের কারণে কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। এটিও আর একটি বড় কারণ। বেশির ভাগ সময়ই রোগী অন্য কোনো কারণে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে গেলে ধরা পড়ে যে তাঁর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এ জন্য বয়স ৪০ বছর পেরোলেই বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ মাপা জরুরি।

আজকাল তুলনামূলক অনেক কম বয়সেই উচ্চ রক্তচাপ দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো মন্দ খাদ্যাভ্যাস, ওজন বৃদ্ধি আর কায়িক শ্রমের অভাব। এখনকার শিশু–কিশোরেরা ছোটবেলা থেকেই উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও রিফাইন্ড খাবার গ্রহণ করে। তাদের খেলাধুলা ও ছোটাছুটির জগৎও সংকীর্ণ যা ঘরে মুঠোফোনে বা কম্পিউটারের পর্দায় সীমিত। তা ছাড়া বেড়েছে মানুষের মানসিক চাপ বা স্ট্রেস। তাই অল্প বয়সেই দেখা দিচ্ছে উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ। যদি পরিবারে উচ্চ রক্তচাপ অথবা হাইপারলিপিডিমিয়ার ইতিহাস থাকে, যদি কেউ ওজনাধিক্য বা স্থূলতায় আক্রান্ত হন বা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, ধূমপান বা মদ্যপান করেন তবে অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপের বিষয়ে সাবধান থাকবেন। এর বাইরে যখনই যেকোনো কারণে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যাবেন কিংবা যখনই সুযোগ হবে, তখনই রক্তচাপ মাপুন। চাকরিতে প্রবেশ করলে বাৎসরিক চেকআপ বা প্রতিবেদনের সময় রক্তচাপ মাপুন। অর্থাৎ নিজের রক্তচাপের দিকে সতর্ক নজর রাখুন।

রক্তচাপ বেশি পাওয়া গেলে প্রথমেই জীবনাচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। লবণ কম খেতে হবে, পাতে আলাদা লবণ একদম খাওয়া চলবে না। ওজন বেশি থাকলে কমিয়ে ফেলতে হবে। উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। তেল-চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। বেশি করে টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। কায়িক শ্রম বাড়াতে হবে। দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটা ভালো। জীবনযাপনে এটুকু পরিবর্তন আনলেই রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। একবার ওষুধ শুরু করলে সারা জীবন খেতে হবে, তাই ওষুধের প্রতি অনেকের প্রথমে অনীহা থাকে। তবে কারও শুরুতেই অনেক বেশি রক্তচাপ থাকলে আর জীবনাচরণ পরিবর্তনের পরও রক্তচাপ বেশি পাওয়া গেলে অবশ্যই ওষুধ খাওয়া উচিত। অনেকে রক্তচাপ স্বাভাবিক হলে ওষুধ বন্ধ করে দেন বা অনিয়মিতভাবে খান। এটাও ঠিক না। ওষুধ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাই রক্তচাপ মাপলে তা স্বাভাবিকই পাবেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া যাবে। রক্তচাপ বেশি নেমে গেলে বা ওঠানামা করলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করা যাবে বা প্রয়োজনে ওষুধ পরিবর্তন করা যাবে। কিন্তু কখনোই নিজে নিজে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। সকলের সম্মিলিত সচেতনতাই পারে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টিকারী এই উচ্চ রক্তচাপের মত রোগকে রুখে দিয়ে সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে।

ডা. হিমেল ঘোষ

এমবিবিএস(ঢাকা মেডিকেল কলেজ), বিসিএস(স্বাস্থ্য),

মেডিকেল অফিসার,

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply