রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মো. মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় এই পর্যন্ত ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে। সেখানে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে ৩ আসামি।তারা হলেন, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, আজিজুল হক ও নজিম।
এ ঘটনায় সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিন আসামীর ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাহউদ্দিন। ১/ইস্ট ব্লক-ডি-৮ এর আব্দুল মাবুদের ছেলে মো. রশিদ প্রকাশ মুরশিদ আমিন, একই ক্যাম্পের বি ব্লকের ফজল হকের ছেলে মোহাম্মদ আনাছ এবং ক্যাম্প-১/ওয়েস্টের বি-ব্লকের নুর সালামের ছেলে নুর মোহাম্মদ।
পরের দিন ২৬ অক্টোবর আবেদনের শুনানি শেষে তাদের প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক মুহাং হেলাল উদ্দিন।রিমান্ড শেষে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
১৪ এপিবিএন অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. নাইমুল হক জানান, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ধৃত আসামী আজিজুল হক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মাস্টার মুহিবুল্লাহকে হত্যার দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর রাত অনুমান ১০টায় লাম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে একটি মিটিং হয়। উক্ত মিটিংয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ধৃত আসামী আজিজুল হকসহ আরও ৪ জন উপস্থি ছিল। তথাকথিত দুর্বৃত্তদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মহিবুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে মর্মে উক্ত মিটিং এ আলোচনা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয় যে, মাস্টার মহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন সংক্রান্তে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় দিনে দিনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছে। তাকে থামাতে হবে। পরবর্তীতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এশার নামাজের পর মাস্টার মহিবুল্লাহ তার শেডে ফিরে গেলে মুরশিদ আমিন তাকে নিজ শেডের বাইরে ডেকে নিয়ে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা বলে এবং কিছু লোক তার সাথে অফিসে কথা বলবে মর্মে অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে পরপর ৪টি গুলি করে মুহিবুল্লাহর মৃত্যু নিশ্চিত করে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-১ ইস্ট-ওয়েস্ট (ডি ব্লকে) নিজ অফিসে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে বন্দুকধারীরা। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদি হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা করেন।গত ২৩ অক্টোবর ভোর ৪টার দিকে লম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অধীন লোহার ব্রীজ এলাকা থেকে মুহিবুল্লাহ কিলিং স্কোয়াডের সদস্য আজিজুল হককে গ্রেফতার করে এপিবিএন সদস্যরা। এ সময় তার নিকট থেকে ১ টি ওয়ান শুটারগান এবং ১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। আজিজুল হক হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তার প্রদত্ত তথ্য মতে আরো ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- মুরশিদ আমিন, মোহাম্মদ আনাছ এবং নুর মোহাম্মদ।
অপরদিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন)।কিলিং মিশনে সম্পৃক্ত ৫ সন্ত্রাসীসহ এ পর্যন্ত ১৭২ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৪ এপিবিএন অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. নাইমুল হক বলেন, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত আরসা নামধারি ১১৪ জন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদক ব্যবসা, চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত আরো ৫৮ জন ধরা পড়ে। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডে জড়িত ১০ জন রয়েছে। সেখানে ৩ জন আসামি দোষ স্বীকার করেছে। তারা বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. নাইমুল হক আরও বলেন, অভিযানে ১১২৯৪টি ইয়াবা, ৪০ গ্রাম গাঁজা, ৪ টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, ২ রাউন্ড ৭.৬২ চায়না রাইফেলের গুলি, ১৪ টি রামদা, ৫টি লোহার হাসুয়া, ১টি কিরিজ,১২টি দা, ৩টি লম্বা আকৃতির ধামা, ১টি ছোরা ও একটি রড উদ্ধার করা হয়।
তাছাড়া অবৈধ মজুদ করে রাখা ৬০০ কেজি চাল, ৮৯ লিটার তেল সহ আরো অনেক কিছু উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত ৫টি মামলা, ডাকাতি প্রস্তুতির ৫টি মামলা, মাদক মামলা ১৩ টিসহ সর্বমোট ২৫ টি মামলা দায়ের করা হয়। তাছাড়া মোবাইল কোর্টে বিভিন্ন অপরাধে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আরো ৫৯টি মামলা করা হয়। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয় এবং ৫৩২০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
মো. নাইমুল হক বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। আমরা চাই সাধারণ রোহিঙ্গারা ভালো থাকুক। তথাকথিত দুর্বৃত্ত গ্রুপের নাম করে কাউকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে দেয়া হবে না।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মো. নাইমুল হক। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অন্য দেশের দুর্বৃত্তদের কোন স্থান নেই। অভিযান অব্যাহত থাকবে।