উখিয়া, কক্সবাজার, প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের যুগ-যুগ ধরে বিদ্যুৎ বঞ্চিত একটি গ্রামের নাম ৫ নং ওয়ার্ডের হাকিম পাড়া। যেটি ঘোনার পাড়া নামেও পরিচিত।
‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ, ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ’ এ শ্লোগান হাকিম পাড়ার জন্য উল্টো। দেশের অন্যান্য মফস্বল এলাকায় বিদ্যুতায়িত হলেও হাকিম পাড়াটি বিদ্যুতের আলোই আলোকিত না হওয়ায় ওই গ্রামের বাসিন্দারা নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গত দেড় বছর পূর্বে হাকিম পাড়ার বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে ৪৫ জনের স্বাক্ষরিত উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ইনচার্জ বরাবর বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন।এনিয়ে ৬ আগষ্ট বিকেলে হাকিম পাড়ায় মানববন্ধনে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
তারা জানান,সরকারী ভাবে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার জন্য কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ার দ্ধারা সার্ভে ম্যাপ-শীট তৈরী পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করে।তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিযুক্ত ইঞ্জিনিয়ার এসএম আলমগীর হোসেন ও কামাল হোসেন এবং উখিয়াস্থ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান মুফিজ উদ্দিন চৌধুরী মিলে হাকিম পাড়ার বিদ্যুৎ সংযোগ প্রার্থী ৪৫ জনের নিকট থেকে ঘর পিছু ৫ হাজার টাকা করে খরচের টাকা দাবী করেন।
হাকিম পাড়ার আবদুস শুক্কুরের ছেলে আবু তালেব(৩৯),হাবিবুর রহমানের স্ত্রী লাইলা বেগম (৩৫) ইউসুফ আলীর স্ত্রী নুর আয়েশা( ৬০), আবদুস শুক্কুরের ছেলে আবু ছৈয়দ( ২৮),নুর হোছাইনের ছেলে বেলাল উদ্দিন(২০),হাকিম পাড়ার সমাজ সর্দার আলী আকবর সহ অর্ধ শত নারী-পুরুষের এক বাক্যে অভিযোগ করে জানান,সরকারী ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার প্রাথমিক ভাবে ১০/১৫ টি রড সিমেন্টর তৈরী বিদ্যুতের খুটি আনার পর থেকে ঠিকাদার লাপাত্তা বলে দাবী করেন।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান,দ্রত সময়ে হাকিম পাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসএম আলমগীর হোসেন,কামাল হোসেন ও থাইংখালীর মুফিজ উদ্দিন চৌধুরীর দাবিকৃত খরচের টাকার জন্য তারা পরিবার পিছু টাকা উত্তোলন করে মুফিজ উদ্দিনের মাধ্যমে এসএম আলমগীর হোসেন ও কামাল হোসেন কে দুই কিস্তিতে ৫০ হাজাট টাকা এবং আরো তিন কিস্তিতে ২৬ হাজার টাকা প্রদান করেন বলে জানান।কিছু খুঁটি এনে হাকিম পাড়ার রাস্তায় ফেলে চলে গেছে। বিগত ১৬ মাস ধরে খুঁটিগুলো রাস্তায় পড়ে আছে।দীর্ঘ দেড় বছর অতিবাহিত হতে চলেছে হাকিম পাড়া বাসি বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়াতে একদিকে রোহিঙ্গা চোর-ডাকাতের আতংক,ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে ফলে কেরাসিন আর মোমবাতির আলোর ভরসায় হিমসিম খাচ্ছে।রাত-বিরাতে বাড়ি-ঘরে আসা-যাওয়ায় অন্ধকারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে রয়েছে হাকিম পাড়ার একাংশের ৫০ টি পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিক বাসিন্দা।
স্থানীয় মুফিজ উদ্দিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন,আমি কোন ধরণের টাকা-পয়সার লেনদেন করি নাই।খুরুস্কুলের আলমগীর নামক এক ইলেকট্রিশিয়ান দ্রত সময়ে খুঁটি স্থাপন ও মিটার বসাবে বলে ২৬ হাজার টাকা নিয়েছে হাকিম পাড়ার জনৈক নুর হোসেনের নিকট থেকে। আমি সামনে ছিলাম।আমি আর কিছু জানিনা।
ইলেকট্রিশিয়ান এসএম আলমগীর হোসেন এর নিকট জানতে চাইলে,এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,সার্ভে রিপোর্ট সহ সব কিছু ঠিক আছে।বিদ্যুৎ অফিসের জটিলতায় এগোচ্ছেনা।আগামী ১৬ আগষ্ট টেন্ডার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আর টাকা লেনদের বিষয়ে ২০ হাজার টাকা খুশিমনে খরচের জন্য দিয়েছে বলে স্বীকার করেন,যাতে দ্রুত সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পায়।
উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ইনচার্জের ব্যবহ্নত (০১৭৬৯৪০০১২৫) কল দিলে রিসিভ না করাই মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পালংখালী ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আমিন জানান,কিছু খরচপাতি দেওয়ার পরও কোন অদৃশ্য কারণে হাকিম পাড়ার ঘোনার পাড়া অংশ বিদ্যুতায়িত হচ্ছে না আমার প্রশ্ন জাগে।দ্রত সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছি।
পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন,’প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ, ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ’প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা পালংখালীর তেলখোলা ও হাকিম পাড়ায় বাস্তবায়িত হচ্ছেনা।রিজার্ভ বনভূমির অজুহাতে তেলখোলা অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। জেলার বহু রিজার্ভ জায়গার বসত-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতায়িত হয়েছে।শুধু আমার ইউনিয়নের বাসিন্দারা কেন বিদ্যুৎ বঞ্চিত হবে।হাকিম পাড়ায় বিদ্যুৎ পাওয়ার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন, খুঁটি এনে ফেলে রেখেছে।টাকা ছাড়া কোন কাজ হয়না জানি,টাকা দেওয়ার পরও কেন বিদ্যুৎ বঞ্চিত হবে?পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কিছু দালাল চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।তাদের কারণে যতসব গড়িমসি।
দ্রুত সময়ে পালংখালী ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বঞ্চিত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হউক।