ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ):
বর্ষা মানেই খাল-বিলে থৈ থৈ পানি; নদী-নালা খাল-বিল নতুন পানিতে টইটম্বুর।এ সময় বর্ষার পানিতে ছুটে আসে নানা প্রজাতির মাছ।তাই গ্রামাঞ্চলে নানা কৌশলে মাছ শিকার করা হয় এই সময়।বাঁশ দিয়ে তৈরি মাছ ধরার উপকরণগুলোর মধ্যে উনিয়া, ভাইর, চাবি(ছোট পলো), পেঁচা, খালই তৈরি ও কেনাবেচার ধুম পড়েছে ঈশ্বরগঞ্জে।বাঁশ বেতের কুটির শিল্প কারিগররা এসব উপকরন তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে অর্থিকভাবে তারা লাভবান হচ্ছেন।
জানা যায়,ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২শতাধিক পরিবার বাঁশের তৈরী কুটির শিল্পের কাজ করে সারা বছর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।অনেকেই এ পেশা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।এখানকার তৈরি চাঁই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে পাশ্ববর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গুণগত মান ভালো হওয়ায় আশানুরুপ দাম পাচ্ছেন চাঁইশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।নিম্ন আয়ের অনেক পরিবার বাড়তি আয়ের উৎস হিসেব চাঁই তৈরিকে বেছে নিয়েছে।বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি এসব চাঁই ভালো মানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছশিকারিরাও এসব হাটবাজার থেকে কিনে নিয়ে যান।বর্ষা মৌসুমে চাঁইয়ের কদর বেশি হওয়ায় চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলা মৌসুমের দুই-তিন মাসেই প্রায় সারা বছরের আয় করে নেন।
মাছ ধরার উপকরণ তৈরীর কারিগর উপজেলার খৈরাটি গ্রামের আব্দুল গণি জানান, বিভিন্ন পেশার উপর আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাব পড়ে অধিকাংশই আজ বিলুপ্তির পথে।বাঁশ বেতের কুটির শিল্পের উপরও প্রযুক্তির প্রভাবের ফলে পেশাদার কর্মীরা অবহেলিত হয়ে অন্য পেশা জড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু বাঁশ বেতের ক্ষুদ্র কুটির শিল্প এখনো কোন রকমে টিকে আছে।ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের পেশাদার কর্মীরা মোড়া,চেয়ার,দোলনা,ঝুড়ি,দাড়ি-চাটাই,খাঁচা,সিলিং,তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে
থাকেন।বর্ষা ঋতুতে যখন নদী-নালা, খাল-বিল,পানিতে ভরে উঠে।তখন গ্রামের সাধারণ মানুষ ও মৎস্যজীবিরা উনিয়া, াইর,চাবি,পেঁচা,দিয়ে মাছ ধরায় মেতে উঠে।তখন বাজারে এসব উপকরণ বিক্রির ধুম পড়ে যায়।
বিশ্বনাথপুর গ্রামের কুটির শিল্পী হাবিবুর রহমান, আব্দুল মোতালেব, চরসৈয়দভাকুরী গ্রামের জয়নাল আবেদীন জানান,বাজারে আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এসব উপকরণ বেশী বিক্রি হয়ে থাকে।
এই তিন মাস উপকরণ বিক্রি করে কারিগররা মোটা অংকের আয় করে থাকেন।এ আয়ের সাথে বছরের বাকী সময় যে বেচা কেনা হয় তা মিলিয়ে পরিবারের ভরণ পোষণ ভালভাবেই চলে।
কুটির শিল্পের দক্ষ কারিগর আব্দুল গণি বলেন,মোরাল বাঁশের শলা, তালের আঁশ, লাইলং সুতা, ও গুনা তার দিয়ে উনিয়া,ভাইর,চাবি),পেঁচা,খালই ইত্যাদি তৈরী করতে হয়।তিনি আরো বলেন, একটি ছোট উনিয়া তৈরি করতে খরচ হয় ১শ থেকে ১শ ৫০টাকা, বিক্রি হয় ২শ থেকে ২শ ৫০টাকা।একটি বড় উনিয়া তৈরি করতে খরচ হয় ২শ টাকা বিক্রি হয় ২শ ৫০ থেকে ৩শ টাকা। ভাইর ১শ থেকে ১শ ৫০টাকা ও চাবি ৩শ টাকা।মাছ ধরার উপকরণের পাশাপাশি কারিগররা ডালা,কুলা,খাঁচা,চালুন,ওড়া(মাটি কাটার টুকরী),খালই বিক্রি করছে দেদারছে।
কুটির শিল্পী কারিগর জয়নাল আবেদীন জানান, বাড়ীতে বসে বিভিন্ন উপকরণ তৈরী করে স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করে থাকেন।
বাজারের ইজারাদার আব্দুল মতিন বলেন,বছরের এই সময় প্রতি সপ্তাহের হাটে চলে কেনাবেচার ধুম।প্র্রয়োজনের তুলনায় বাজারে চাঁইয়ের সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি।কয়েক দিন পর সরবরাহ বাড়বে বলে জানান তিনি।