কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: মফস্বলে অনেক সাংবাদিক আছেন যারা সত্য তথ্যটি তুলে ধরার জন্য ঘটনা স্থলে যান এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য মাঠ-ঘাট, গ্রাম্য জনপদ চষে বেড়ান। সেই সব সাংবাদিকরা হলেন চারণ সাংবাদিক । ইলিয়াস আসলেই যদি একতরফা উপস্থাপনা সাংবাদিক হয় তাহলে সেটা সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে কিনা তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি দেশের নানা ধরণের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন কিন্তু কুষ্টিয়ার সেই রুবেল হত্যার কথা একবারও তুলে ধরেননি। দেশ ও দেশের জনগণকে নিয়ে ভাবতে হবে এ কথা তিনি ঠিকই বলেন,কিন্তু দেশের সাধারণ জনগণের জন্য কোনরকম সাহায্য করেননি। আবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক একতরফা কথাও বলেন। এই রকম মুখস্থ বক্তব্য দেশের উন্নয়নমূলক কাজে আসবে কিনা তা জানার প্রয়োজন টুকু মনে করেন না তিনি।
গত ৩ জুলাই রাতে নিখোঁজ হন স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। ৭ জুলাই গড়াই নদী থেকে উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। প্রায় তিন মাস ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তার হত্যার মূল আসামি গ্রেফতার হয়নি। যখন সাংবাদিক রুবেল হত্যার বিষয়ে নিয়ে সারাদেশ তোলপাড় তখন নিশ্চুপ ছিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস। নিজের ফেসবুক পেইজে বড় বড় ভাষণ দিয়েছেন, কথা বলেন একজন সাংবাদিকের লেখনির মাধ্যমে দেশের উপকার হবে এটাই দেশের সাধারণ জনগণ প্রত্যাশা করেন। সংবাদ প্রকাশ করে যদি দেশের উপকারে না আসে বাইরের দেশে বসে ভাষণ দিয়ে কি লাভ ? একজন সাংবাদিক কখনো মৃত্যুকে ভয় পায় না। দেশের হাজারো সাংবাদিক নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের মানুষের কল্যাণে। কখনোই দেশের বাইরে পালিয়ে থাকেননি। কাঙাল হরিনাথের মাটিতে এই প্রথম কোনো সাংবাদিক হত্যা হয়েছে যার কোনো সুরাহা এখন পর্যন্ত হয়নি। কুষ্টিয়াবাসী এক অন্যরকম আতংকের মাঝে বসবাস করছেন। এই দেশে সাংবাদিক যদি সুরক্ষা না পায় সে দেশের সাধারণ জনগণের ভরসাস্থল কোথায় ? মনে পড়ে ১৯৭১ সালের সেই সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের কথা।
চারিদিকে তখন চলছে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, প্রতিরোধ৷ চারপাশে শুধু বুলেটের শব্দ আর বারুদের গন্ধ, চিৎকার।শিলালিপির উপরও নেমে আসে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর খড়্গ৷ হাসেম খানের প্রচ্ছদ করা একটি শিলালিপির প্রকাশিতব্য সংখ্যা নিষিদ্ধ করে দেয় পাকিস্তান সরকার৷ পরে অবশ্য প্রকাশের অনুমতি মিললো তবে শর্ত হলো নতুনভাবে সাজাতে হবে৷ সেলিনা পারভীন বরাবরের মতো প্রচ্ছদ না নিয়ে তাঁর ভাইয়ের ছেলের ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে শিলালিপির সর্বশেষ সংখ্যা বের করেন৷ কিন্তু এর আগেই সংখ্যার জন্যই সেলিনা পারভীন পাকিস্তানী ও তাদের দালালদের নজরে পড়ে যান৷ যেটাতে ছিল দেশ বরেণ্য বুদ্ধীজীবীদের লেখা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লেখা৷ তাই কাল হলো৷ শিলালিপির আরেকটি সংখ্যা বের করার আগে নিজেই হারিয়ে গেলেন৷ ১৮ ডিসেম্বর সেলিনা পারভীনের ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায় রায়েরবাজার রক্তাক্ত ভূমিতে৷ এই রকম শত শত সাংবাদিক হত্যার ঘটনা আছে যা বলে হয়তো শেষ করা যাবে না। কিন্তু সাংবাদিক ইলিয়াস সরকার বিরোধী এজেন্ট হয়ে কাজ করছে এমন ধারণা দেশের জনগণ বুঝতে পেরেছে। এমনকি দেশের চারণ সাংবাদিকদেরকে সরকারের পোষা দালাল বলেন।