ইতিকাফ এমন এক মহৎ ইবাদত, যেখানে বান্দা দুনিয়ার সব বন্ধন ছিন্ন করে কেবলমাত্র আল্লাহর হয়ে যায়। বিশেষত রমজানের শেষ দশকে এই ইবাদত পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।
আল্লামা ইবনুল মুনজির (রহ.) বলেন, সব আলেম একমত যে ইতিকাফ সুন্নত, ফরজ নয়। তবে কেউ যদি মানত করে নিজের ওপর ওয়াজিব করে নেয়, তবে তা ওয়াজিব হয়ে যায়।
শরিয়তের দৃষ্টিতে, ইতিকাফ মানে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ করা। (উমদাতুল কারি, খণ্ড-১১, পৃষ্ঠা-১৪০)
আর রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি স্বতন্ত্র সুন্নত।
১. ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেন, সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সব নেকি তার জন্য লেখা হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮১)
২. অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতিকাফ করে আল্লাহ তার মধ্যে ও জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন, যা পূর্ব-পশ্চিমের চেয়েও বেশি দূরত্ব। (আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, হাদিস : ৭৩২৬; শুআবুল ঈমান লিল বায়হাকি, হাদিস : ৩৯৬৫)
লাইলাতুল কদরপ্রাপ্তিতে ইতিকাফের গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকেও উত্তম।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ৩)
সেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইতিকাফের মূল লক্ষ্য ছিল লাইলাতুল কদর পাওয়া। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন।
ইতিকাফের কিছু মাসআলা
১. ইতিকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। হাদিসে আছে, একান্ত বাধ্য না হলে মসজিদ থেকে বের হবে না। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২১১৫)
মনে রাখবেন, ইতিকাফ মানে বান্দা সম্পূর্ণ আল্লাহর হয়ে যাওয়া। মসজিদে সঙ্গীদের সঙ্গে গল্প করা, মোবাইলে ফোনালাপ, গোসল করতে বেশি সময় লাগানো—এসব ইতিকাফ পরিপন্থী কাজ। ইতিকাফে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার সব কিছুর চিন্তা থেকে মনকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেবল আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতে হবে। তবেই ইতিকাফ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ নোমান