অনলাইন ডেস্ক:
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত মারিওপোলের অবরুদ্ধ আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় থাকা তার যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া। ক্রেমলিনের তথ্য মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের সঙ্গে ফোনালাপের সময় পুতিন এ মন্তব্য করেন।
এর আগে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছিল, রুশ সেনারা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে আজভস্তাল কারখানা এলাকায় হামলা চালাচ্ছে এবং সেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে নির্মূল করাই তাদের লক্ষ্য।
মস্কোর কর্মকর্তাদের মতে, পুতিন বলেছেন রুশ বাহিনী কারখানায় আটকে থাকা বেসামরিক লোকদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ দিতে প্রস্তুত।
ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের মতে, প্রায় ২০০ বেসামরিক লোক এখনো রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মধ্যে কারখানাটির ভেতরে আটকা পড়ে আছে। তবে ক্রেমলিন সেখানে হামলার মাত্রা বাড়ানোর কথা অস্বীকার করেছে।
গতকাল ইউক্রেনের আজভ রেজিমেন্টের কমান্ডার সেভিয়াস্তোস্লাভ পালামার বলেন, ‘রুশরা যুদ্ধবিরতির অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে এবং তারা মারিওপোলের বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিতে দিচ্ছে না। ’ প্রাণ বাঁচাতে আজভস্তাল কারখানার বেসমেন্টে লুকিয়ে থাকা বেসামরিক লোকজন আশ্রয় থেকে বের হতেই পারছে না বলে তিনি জানান।
রুশ সেনাবাহিনী গত বুধবার আজভস্তালে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। তবে তা কেবল দিনের বেলার জন্য প্রযোজ্য বলে জানায়। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা অবস্থায় বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকালেও রুশ বাহিনী দাবি করে, বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিতে মানবিক করিডর চালু রয়েছে।
এর বিপরীতে ইউক্রেনীয় কমান্ডার পালামার দাবি করেন, রুশ বাহিনী ‘তিন দিন আগেই’ আজভস্তালে ঢুকে পড়েছে এবং সেখানে ‘রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে’। তিনি আরো বলেন, যোদ্ধাহত সেনারা পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রণায় কাতরে মারা যাচ্ছে।
আজভস্তালে রুশ বাহিনীর হামলার তীব্রতা তুলে ধরে ইউক্রেনের সামরিক কর্তৃপক্ষ জানায়, ধ্বংসপ্রায় কারখানা কমপ্লেক্সে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অবশিষ্ট ইউনিটগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। লক্ষ্য অর্জনে রুশ বাহিনী যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে।
আলোচনা নিয়ে রাশিয়ার অভিযোগ
এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আলোচনায় চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার অভিযোগ করেছে। ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন এমন একজন রুশ রাজনীতিক বলেছেন, দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা কঠিন অবস্থায় পড়েছে। রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাসের উদ্ধৃত করা মন্তব্যে লিওনিদ স্লুটস্কি ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান চুক্তিগুলো থেকে সরে যাওয়ার অভিযোগ তোলেন। ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তা থেকে খুব কমই অর্জিত হয়েছে।
‘রাশিয়ার জয় রোখা যাবে না’
এদিকে আজভস্তালে হামলার ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়ার পরিবর্তে ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমাদের ভূমিকায় বিষোদ্গার করেছে রাশিয়া। গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য তথা গোটা ন্যাটো ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা অস্ত্র পাঠাচ্ছে। এসব তৎপরতা (রাশিয়ার) অভিযান দ্রুত সম্পন্ন করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। … বাইরে থেকে ইউক্রেনে আসা এসব সাহায্য রুশ বাহিনীর ‘লক্ষ্য অর্জন রুখতে পারবে না’।
ইউক্রেনের সহায়তায় তহবিল
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে আয়োজিত এক সম্মেলনে ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য সাড়ে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল গঠন করা হয়েছে। গতকাল পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা।