Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
আলেশামার্টের প্রতারণা : প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন ভুক্তভোগীরা

আলেশামার্টের প্রতারণা : প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন ভুক্তভোগীরা

স্টাফ রিপোর্টার:

আলেশামার্টের প্রতারণার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আজ শুক্রবার বিকেল তিনটায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশের শতাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহক অংশ নেন।

সংবাদ সম্মেলেন বলা হয়, গ্রাহকদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। এই টাকা উদ্ধারে সরকারের সুদৃষ্টি জরুরি।

গ্রেপ্তার করে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। তাই গ্রাহকদের মূল টাকা উদ্ধারে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আলেশামার্ট কাস্টমার অ্যাসোসিয়েশন, আলেশামার্ট বিক্ষোভ ও আন্দোলনের গ্রুপের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন। এতে সুনিদির্ষ্টি সাতটি দাবি উপস্থাপন করা হয়।

যার মধ্যে রয়েছে অনতিবিলম্বে গ্রাহকদের মূল টাকা ফেরৎ দেওয়া। আলেশামার্টের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিদেশ গমন নিষিদ্ধ করা। দাবি আদায় না হলে, চেয়ারম্যান যদি বিদেশ পালিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের সকল দায় দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মহলকে নিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব মেয়াদ উত্তীর্ণ চেক রিপ্লেস করা, বন্ধ কল সেন্টার চালু করে গ্রাহকদের সেবার মান নিশ্চিত করা। গ্রাহকদের বর্তমান করুণ অবস্থা বিবেচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মহল এক হয়ে একটা কমিটি করতে হবে। যে কমিটি চাপ প্রয়োগ করে আলেশামার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদারকে বাধ্য করবেন গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে। আর যদি চাপ প্রয়োগে কাজ না হয়, সে ক্ষেত্রে গঠিত কমিটি চেয়ারম্যানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে গ্রাহকের দেনা পরিশোধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মঞ্জুর আলম শিকদার বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভে এসে বলেছেন, তার দেনার চেয়ে, যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ আছে। তার সম্পদ থাকলে গ্রাহকের দেনা পরিশোধে এত গড়িমসি কেন? আমরা কারো ভিক্ষা, করুণা বা দান চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য ও কষ্টের টাকা ফেরত চাই। আমরা আর কারো মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাসী নই।

আশরাফুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক ভুক্তভুগীদের পক্ষ থেকে জানান, অনতিবিলম্বে গ্রাহকের বকেয়া টাকা পরিশোধ করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অন্যথায় আলেশামার্ট কাস্টমার অ্যাসোসিয়েশন পাওনা টাকা আদায়ে পরবর্তীতে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচির ঘোষণা করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আলেশামার্ট কম্পানির চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার এ প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে “আছি তো আমরা আছি তো” এই স্লোগান নিয়ে বাজারে কাজ শুরু করে। কিছুদিন ভালো সার্ভিস দেওয়ার পর, আলেশামার্ট গত বছরের মে-জুন মাসে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করে যেখানে তারা বাইকের উপর ৩৫% ছাড় দিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে বাইক প্রদান করবে এমন প্রতিশ্রুতি দেয়। ওই ক্যাম্পেইনে আমাদের জানা মতে, ১ মাসের মধ্যে ৪৬ হাজার বাইকের অর্ডার পড়ে।

এরপর আগস্টে ব্যাংক ডিপোজিট নামে বাইকের উপর ৩৩% ছাড়ের আরেকটি ক্যাম্পেইন চালু করে। ২টা ক্যাম্পেইন মিলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার অর্ডার করে আলেসামার্টের প্রায় ৭ হাজার গ্রাহক। পরবর্তীতে তারা গ্রাহকদের পণ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায়, গ্রাহকদের চাপের মুখে পণ্য/রিফান্ড কোনোটাই না দিয়ে গ্রাহকদের হাতে বিভিন্ন তারিখের চেক ধরিয়ে দেয়। কিন্তু নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী অপর্যাপ্ত টাকা থাকায় চেকগুলা ব্যাংক হতে ফেরত দেওয়া হয়। এতে করে গ্রাহকরা হতাশ হয়ে পড়েন। চেয়ারম্যান ফেসবুক লাইভে এসে জানান তারা নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী টাকা দিতে পারবেন না। তিনি সবাইকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেন এবং চলতি বছর ১ জানুয়ারি হতে ক্রমান্বয়ে টাকা দেওয়া শুরু করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেটি তিনি করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিনি বার বার ব্যর্থ হয়ে মঞ্জুর আলম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের সাথে মিটিং করে সবাইকে আস্বস্থ করেন তিনি ব্যাংক ঋণের চেষ্টা করছেন। সেটা জুন মাসের ভিতর হয়ে গেলে তিনি জুলাই এর প্রথম সপ্তাহ থেকে সবাইকে রিফান্ড দেওয়া শুরু করবেন। এই কথার ভিত্তিতে তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সফিক জামান গ্রাহকদের জুলাই এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করেন। কিন্তু জুলাই শেষের দিকে হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে গেটওয়েতে থাকা ৪২ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়েছে। বাকী ২৫৮ কোটি টাকার গ্রাহকদের দেওয়া অধিকাংশ চেকের মেয়াদ শেষ। কারো কারো প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু আলেশামার্টের চেয়ারম্যান চেক রিপ্লেস এবং মূল টাকা ফেরৎ দেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি তাদের সকল অফিস, কল সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply