অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগের বিভাগীয় উপকমিটি গঠন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা ৩৫ সদস্যের খসড়া কমিটিতে জায়গা দিতে পারেননি অ্যাকটিভ অনেক সদস্যকে।জায়গা দেয়া যায়নি সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেককে। এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, সাহেদদের মতো বিতর্কিতরা যেন আর উপকমিটিতে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্লেন (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, উপকমিটিগুলোতে এবার যেন কোনোভাবেই বিকর্তিক ব্যক্তিরা ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা কঠোরভাবে নজর রাখছি।খসড়া তালিকায় যাদের নাম থাকবে তারা সেই সংশ্লিষ্ট কমিটির কাজের সঙ্গে যুক্ত কিনা? তারা আওয়ামী পরিবারের সদস্য বা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কিনা? তাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে কিনা?- এই বিষয়গুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২১তম জাতীয় সম্মেলনের পরই উপকমিটিগুলোতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেয়া হয়। তার সঙ্গে বিভাগীয় সম্পাদক বা উপকমিটির সদস্য সচিব মিলে গঠনতন্ত্রের নতুন নিয়ম মেনে পূর্ণাঙ্গ উপকমিটি গঠনের কাজ শুরু করেন। এই খসড়া কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একাধিকার আলোচনাও করেছিলেন তারা। কয়েকটি উপকমিটি অনুমোদনের জন্য খসড়া তালিকা জমাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয় করোনা সংকট। আওয়ামী লীগ তাদের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করলে উপকমিটিগুলো গঠনের কাজও বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে খসড়া উপকমিটিগুলোই করোনা সংকটে কাজ চালিয়ে আসছিল। কমিটির নেতারাও উপকমিটির পদ-পদবি ব্যবহার করে আসছিলেন। এরই মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ বিতর্ক সামনে আসার পরে আওয়ামী লীগের উপকমিটি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। সাহেদ আওয়ামী লীগের একটি উপকমিটির সদস্য ছিল। সর্বশেষ ২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপকমিটির খসড়া জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওইদিন বৈঠকে উপকমিটি গঠনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদকদের কঠোরভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল।
ঢালাওভাবে বিপুলসংখ্যক সদস্য না রাখা এবং প্রতিটি উপকমিটিতে সর্বোচ্চ ৩৫ জন সদস্যবিশিষ্ট করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বেশির ভাগ উপকমিটির তালিকা আগেও একবার জমা দিয়েছিলেন। তবে নতুন করে ৩৫ সদস্যের কমিটি করার নির্দেশনা দেয়ায় আবার নতুন করে তালিকা দিতে হয়েছে। কমিটির আকার ছোট করতে গিয়ে তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। কারণ আগের কমিটির অনেক সক্রিয় নেতাদের রাখতে পারছেন না। আবার এতদিন অননুমোদিত কমিটির সদস্য হয়ে কাজ করেছেন এমন বেশকিছু সদস্যকে বাদ দিতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী যুগান্তরকে বলেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণে অনেক কাজ। এখানে ৩৫ সদস্যের কমিটি দিয়ে এত কাজ করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া আমরা শুরু থেকেই যাদের নিয়ে কাজ করেছি এবং এখনও করছি তাদের বাদ দেব কীভাবে? এই বিষয়গুলো আমরা আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া শনিবার (আজকে) দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সুযোগ পেলে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, আমরা আমাদের উপকমিটি ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দিয়েছি। ৩৫ সদস্যের কমিটি করার কারণে ভালো কাজ করার পরও অনেককেই রাখা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা আমাদের উপকমিটির কাজের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত রাখব।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ৩৫ সদস্যের (উপকমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব বাদে) খসড়া কমিটি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দিয়েছি। গঠনতন্ত্রে আওয়ামী লীগের ১৯টি সম্পাদকীয় বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। এর বাইরে কিছুদিন আগে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। ফলে এই দুটি বিভাগীয় উপকমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকা জমা দিতে পারছে না।এর বাইরে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সবগুলো উপকমিটির খসড়া তালিকা জমা পড়েছে। তবে কয়েকটি কমিটি ৩৫-এর বেশি সদস্যের তালিকা দফতরে জমা দিয়েছে।