অনলাইন ডেস্ক:
প্রতিবেশী আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখছে বাংলাদেশ। সেখানে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার বিষয়েও পুরোপুরি সজাগ ঢাকা। আপাতত পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছে। তালেবানকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া বা তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের আপাতত কোনো পরিকল্পনা বাংলাদেশের নেই। ঢাকার সরকারি সূত্রগুলো এমন তথ্য জানিয়েছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, আফগানিস্তান থেকে অনেক দেশ তাদের দূতাবাসকর্মীদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। আফগানিস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। তাই ঢাকাকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে না। তবে আফগানিস্তানে বাংলাদেশিরা কাজ করছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এখনো কোনো অনুরোধ পায়নি সরকার। পরিস্থিতি অনুযায়ী এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে বাংলাদেশ। সেখানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের নানা রকম স্বার্থ ও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে। গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আফগান দূত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তালেবানকে লালন-পালন ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনেছেন। আবার পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ তালেবানকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকার করেছে। তালেবান এরই মধ্যে দেশটির বিভিন্ন শহর দখল করা শুরু করেছে। আফগানিস্তানে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন আসছে। এর প্রভাব পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার ওপর পড়তে পারে।
এদিকে ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আফগানিস্তান পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবগুলো মোকাবেলায় কাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন গতকাল রবিবার বলেন, ‘আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আপাতত সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ এখন সেখানে যা ঘটছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে এখানে যেন জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে না যায়।’
আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানের ফলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদের উত্থানের আশঙ্কার দিকে ইঙ্গিত করেন অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই আশঙ্কা করছিলাম। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও এ ধরনের আশঙ্কা ছিল। আমরা বিভিন্ন কারণে হয়তো এ বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিইনি। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের নিবন্ধনগুলোতে বলা হচ্ছিল, কিভাবে আফগানিস্তান পরিস্থিতি মধ্য এশিয়াসহ পুরো অঞ্চলের ওপর প্রভাব ফেলবে।’
জানা গেছে, আফগানিস্তান পরিস্থিতিতে প্রলুব্ধ হয়ে এ দেশের তরুণরা যাতে সেখানে না যায় তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। একই সঙ্গে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আফগানিস্তান পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কী নীতি গ্রহণ করছে তা নিয়েও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, আফগানিস্তানে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তালেবান আগের রূপে সেখানে ফিরে এলে তা পুরো অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। আফগানিস্তানে বাংলাদেশের কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। আগামী দিনগুলোতে আফগানিস্তান পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করবে যে সেখানে তাদের কাজের পরিধি বাড়বে না কমবে।