শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের দণ্ড স্থগিত করা শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। তবে তাঁরা জামিনে থাকবেন এবং তাঁদের সাজা (কারাদণ্ড ও জরিমানা) স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত থাকবে। আর ড. ইউনূসসহ দণ্ডিত চারজনকে বিদেশ যেতে হলে আদালতকে জানিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আবেদনে শুনানির পর সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রুলসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘ফৌজদারি মামলার রায়ের দুটি অংশ। একটি হচ্ছে (দণ্ড) কনভিকশন, আরেকটি হচ্ছে সেনটেনসড (সাজা)। রায়ের দণ্ড কখনো স্থগিত করা যায় না। এ নিয়ে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আছে।
শ্রম আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০২১ মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক অংশগ্রহণ ও কল্যাণ তহবিল গঠন এবং তহবিলে নিট মুনাফার ৫ শতাংশ না দেওয়া, শ্রমিক-কর্মচারীদের অর্জিত ছুটি মজুরিসহ নগদায়ন না করা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী না করার জন্য শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরে শ্রম আইনের ৩০৩(ঙ) ও ৩০৭ ধারার অধীনে অপরাধের অভিযোগ এনে গত বছর ৬ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারিক আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্কের পর গত ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার রায় দেন। রায়ে ড. ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়।
রায়ে বলা হয়, আসামিরা শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪-এর বিধান লঙ্ঘন করে আইনের ৩০৩(৫) ও ৩০৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদেরকে শ্রম আইনের ৩০৩-এর ৩ ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হলো। আর ৩০৭ ধারায় তাঁদের সবাইকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। সব মিলিয়ে ইউনূসসহ চারজনের প্রত্যেককে ছয় মাসের কারাদণ্ডের সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। রায়ে সাজা হলেও সেদিন কাউকে জেলে যেতে হয়নি। রায় ঘোষণার পরপরই জামিন আবেদন করা হলে আপিল করার শর্তে দণ্ডিতদের এক মাসের জামিন দেন বিচারক। গত ৩১ জানুয়ারি এ জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করলেন ড. ইউনূসসহ দণ্ডিতরা।
গত ২৮ জানুয়ারি ইউনূসসহ দণ্ডিতদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তাঁদের জামিন দেন। সেই সঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল সেদিন শ্রম আদালতের রায়সহ মামলার নথি তলব করেন। আগামী ৩ মার্চ এগুলো উপস্থাপনের তারিখ রয়েছে। এ আদেশের পর ড. ইউনূসসহ চারজনকে নিয়মিত জামিন দেওয়ার কথা আইনজীবী জানালেও পরে জানা যায়, ৩ মার্চ পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে।