অনলাইন ডেস্ক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকার নিখোঁজ নন, আত্মগোপনে ছিলেন—এই দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার ১৮ দিন পর গত বুধবার বিকেলে নরসিংদীর মাধবদীর পাঁচদোনায় এক দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তিথিকে উদ্ধার করা হয়।
একই দিন সকালে তাঁর স্বামী শিপলু মল্লিককে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে আটক করা হয়। পরে পল্টন থানায় গত ২ নভেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তাঁদের তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হলে শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শুধু তিথির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গতকাল রাজধানীর মালিবাগে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের ডিআইজি জামিল আহমদ দাবি করেন, তিথি সরকারকে অপহরণ করা হয়নি। বিপদ এড়াতে তিনি আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, এভাবে আত্মগোপনে থেকে অপহরণের দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’সংক্রান্ত ঘটনা থেকে রেহাই পাবেন বা ঘটনা অন্যদিকে ধাবিত হবে। আর আত্মগোপনে থেকে তিথি তাঁর প্রেমিক শিপলু মল্লিককে বিয়ে করেন।
তিথি সরকার তাঁর ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট, কমেন্ট ও তথ্য শেয়ার করেন—এমন অভিযোগে জবির কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমাবেশ করে। তখন তিথি জানিয়েছিলেন, তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে এবং হ্যাককারীরা ওই সব পোস্ট, কমেন্ট ও তথ্য শেয়ার করেছে। এ থেকে তাঁর বিপদ হতে পরে, তাই নিজেকে নিরাপদ রাখতে নিজের সংগঠনের (ছাত্র অধিকার পরিষদ) কিছু নেতাকর্মীর পরামর্শে তিনি গত ২৩ অক্টোবর পল্লবী থানায় একটি জিডি করেন। সিআইডির ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ২৫ অক্টোবর মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বেরিয়ে তিথি প্রেমিক শিপলু মল্লিকের সঙ্গে বাগেরহাটে গিয়ে বিয়ে করেন। ৯ নভেম্বর তাঁরা ঢাকা ফেরেন। পরে নরসিংদীর ওই বাড়িতে আত্মগোপন করেন তিথি। তদন্তের একপর্যায়ে ৩১ অক্টোবর সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিম দেখতে পায়, সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ের চারতলা থেকে তিথি সরকারকে ‘হাত পা-বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে’ বলে একটি মিথ্যা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হয়। এটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তবে সিআইডিতে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার তদন্তে নেমে গুজব রটনাকারী নিরঞ্জন বড়াল নামে একজনকে রামপুরার বনশ্রী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর নিরঞ্জনসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে ২ নভেম্বর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগে আরেকটি মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
যেভাবে নিখোঁজ : পরিবার জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার পর রাজধানীর পল্লবীর বাসাতেই ছিলেন তিথি। গত ২৫ অক্টোবর পল্লবী থানা থেকে সকাল পৌনে ৯টার দিকে এসআই শুভ নামে এক কর্মকর্তা তিথিকে তাঁর মোবাইল ফোনে ফোন করে থানায় যেতে বলেন। সকাল ৯টার দিকে থানার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তিথি। এরপর থেকেই তিথির ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় জানিয়ে বড় বোন স্মৃতি সরকার বলেন, ‘অনেক খোঁজ করেও তার সন্ধান না পেয়ে ২৭ অক্টোবর পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।’ তিনি বলেন, পল্লবী থানার কাছেই তাঁদের বাসা। সেদিন তিথি কেন থানায় যাননি, সেটা তাঁর জানা নেই। পরে পল্লবী থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বললে তারা তিথির বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি। পুলিশ বলছে, তিথি সেদিন থানায় আসেননি। এরপর তিথির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে তিথি সরকারকে গত ২৬ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে জবি প্রশাসন। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের জবি শাখার দপ্তর সম্পাদক। এ ঘটনার পর তাঁকে সংগঠন থেকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।