Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
আজ জাতির জনককে হত্যার কলঙ্কিত দিন
--ফাইল ছবি

আজ জাতির জনককে হত্যার কলঙ্কিত দিন

অনলাইন ডেস্ক:

আজ ১৫ আগস্ট, ইতিহাসের কলঙ্কিত একটি দিন। দিনটি এ দেশের মানুষের জন্য সীমাহীন শোক ও বেদনারও। ১৯৭৫ সালে আজকের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেন বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি আজ দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ অনেককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্ককের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে। তবে এখনো কয়েকজন খুনি বিদেশে পলাতক রয়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের চেষ্টা করছে সরকার।

সম্প্রতি জাতির জনককে হত্যার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের খুঁজে বের করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গতকাল শনিবার এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। তাঁর  হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটাও একদিন বের হয়ে আসবে।

তিনি বলেন, “আমরা জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। আশা করি, জাতির পিতার হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটাও একদিন বের হয়ে আসবে। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ বন্ধ হয়েছে।”

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, জাতির জনককে হত্যার নেপথ্যনায়কদের খুঁজে বের করার জন্য কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের কলঙ্কিত এক অধ্যায়ের জন্ম দেয় খুনিরা। এই ঘটনায় পর্দার সামনে আমরা যাদের দেখেছি তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু নেপথ্যে যারা ছিল তাদের কাউকে এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। আমরা এখন নেপথ্যের নায়কদের বিচার চাই।’

জাতীয় শোক দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : সূর্য উদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সবস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। ভোর সাড়ে ৫টায় ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং সকাল ৬টায় বনানীতে শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সকাল ৭টায় ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে আওয়ামী লীগ। সকাল পৌনে ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি প্রতিনিধিদল এবং গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

বাদ জোহর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দেশজুড়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে মোমবাতি প্রজ্বলন ও বিশেষ প্রার্থনা, সকাল ৯টায় তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনাসভার আয়োজন করেছে। দুপুরে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হবে। বাদ আসর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

আগামীকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply