অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডে নেপথ্যে থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছে তাদের আজ পর্যন্ত মুখোশ উন্মোচন করা হয়নি বলেই এক/এগারোর অঘটনের ঘটনের সময়ও শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের দৃশ্যমান যারা খুনি, সেই দৃশ্যমান খুনিদের আমরা চিনেছি মাত্র।
আজ শনিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে মহিলা শ্রমিক লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট তুলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরবর্তী বাংলাদেশে প্রতিরোধ-প্রতিবাদের ডাকের অভাব ছিল সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন নানক। তিনি বলেন, আমরা যখন ঘুরে বেড়িয়েছি চাতক পাখির মতো। এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আহ্বানের প্রত্যাশায়। তখন প্রতিবাদের আহ্বান আসেনি। অনেক কথা বলার সময় এখনো আসেনি। তাই অনেক কথা বলা যাবে না।
নানক বলেন, সেদিন কে যে কাক আর কে কোকিল? কে আমাদের পক্ষে আর কে আমাদের বিপক্ষে? খুনী মোশতাক যখন বঙ্গবভনে সংসদ সদস্যদের ডাকল আমরা এমপিদের বাড়িতে বাড়িতে চিঠি নিয়ে গিয়ে হুমকি দিয়েছি। বঙ্গভবনে মোশতাকের ওই সংসদীয় সভায় উপস্থিত হওয়া যাবে না। তারপরও কিন্তু অনেকেই সেই সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। বিভ্রান্ত করা হল দেশের মানুষকে। বিভ্রান্ত করা হল বিশ্ববাসীকে।
সেই প্রেক্ষাপটের কথা তুলে সভাপতিমন্ডলীর এই সদস্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার দুই তৃতীয়াংশ মন্ত্রী সেদিন খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ করলেন। সেদিন সেনাবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান পুলিশের আইজি বাংলাদেশ বেতারে গিয়ে সেই সরকারের প্রতি আস্থা জানিয়েছিল। একথা কিন্তু আমরা ভুলি নাই।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা একটু প্রতিবাদ চেয়েছিলাম। বাঙালি একটি প্রতিবাদের ডাক চেয়েছিল। বাঙালি একটি প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিল। সেদিন নেতৃত্বের দুর্বলতা, নয় নেতৃত্বের কাপুরুষতা, নয় নেতৃত্বের ভীরুতা, নয় নেতৃত্বের আত্মসমর্পণের কারণে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে, ওই খুনী শাহরিয়ার, নূর, ডালিম, রশিদ সহ খুনী মোশতাকদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরে প্রতিরোধ গড়তে পারিনি।
নানক বলেন, ১৫ আগস্টের দৃশ্যমান যারা খুনী সেই দৃশ্যমান খুনীদেরকে আমরা চিনেছি মাত্র। কিন্তু অদৃশ্যমান যারা পিছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে তাদেরকে আজো পর্যন্ত বের করা হয়নি। তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়নি। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। আর তাদের উন্মোচন করি নাই বলে এক/এগারোর অঘটনের ঘটন পটিয়সীদের সময়ও শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, আমরা তাদেরকেও চিহ্নিত করতে পারিনি।
১৫ আগস্টের এই নেপথ্যদের যদি খুঁজতে যাই তাহলে একাত্তরকে খুঁজে বের করতে হবে। একাত্তরকে জানতে হবে। একাত্তরে স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন কারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল? কারা আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করেছে? জিয়াউর রহমানের মতো লোকেরা যারা আইএসআইয়ের অনুচর হিসাবে গোয়েন্দা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে। তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
চিহ্নিত করতে পারি নাই বলেই সবসময় একটি অজগর সাপ, একটি জাতিসাপকে নিয়ে পথ চলেছি। আর সেই জাতিসাপ-অজগর সাপ সময়ের অপেক্ষায় ছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
নানক বলেন, রনাঙ্গণের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে পাকিস্তানি চীন-মার্কিন শক্তি পরাজিত হল এবং এদেশীয় রাজাকার আলশামস আলবদররা পরাজিত হল আত্মসমপর্ণ করল আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সেই তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। তাই আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। একাত্তরে কারা পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করতে চেয়েছিল? কেন তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। কেন তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে কেন তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারিনি? আর পারি নাই বলেই তারাই ১৫ আগস্ট ঘটিয়েছে।
১৫ আগস্টের ঘটনায় নেপথ্যের নাটের গুরু তথা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাটের গুরুদেরও মুখোশ উন্মোচন করতে না পারার প্রসঙ্গ তোলেন। নানক বলেন, সেই কারণে আমরা শত্রু-মিত্রকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। আর শত্রু-মিত্রকে যদি চিহ্নিত করতে না পারি তাহলে একসাথে শত্রুকে নিয়ে পথচলা যায় না। জাতিসাপকে নিয়ে একসাথে পথচলা যায় না। তাই জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর উপপ্রধান থাকাকালীন সে তার দায়িত্ব পালন করে নাই।
সেদিন যারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল তারা কিন্তু জয় বাংলা স্লোগানের বদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে পাকিস্তানি কায়দায়, পাকিস্তানি প্রেতাত্মা হিসাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল বলে দাবি করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসাবে হাল ধরার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে আমাদের সেদিন প্রত্যাশার লাল সূর্য উদিত হয়েছিল বলে দাবি করেন।
আয়োজক সংগঠনের সাংগঠনিক শৃংখলার প্রশংসা করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়ে সংগঠনকে আদর্শিকভাবে শক্তিশালি করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ নেতা নানক।
মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সুরাইয়া আক্তারের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সংগঠনের কার্যকরি সভাপতি শামসুন নাহার এমপি বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার সাথী সভা পরিচালনা করেন।