Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
অশুর শক্তির বিনাশের প্রার্থনায় দেবী দুর্গাকে বিদায়
--ফাইল ছবি

অশুর শক্তির বিনাশের প্রার্থনায় দেবী দুর্গাকে বিদায়

অনলাইন ডেস্কঃ

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও নানান আয়োজনের মাধ্যমে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছেন ভক্তকূল। আর মর্ত্যে ‘বাবার বাড়ি’ বেড়ানো শেষে ঘোড়ায় চড়ে ‘কৈলাসে দেবালয়ে’ ফিরেছেন আনন্দময়ী দেবী দুর্গা। তার কাছে অশুর শক্তির বিনাশের প্রার্থনা করেছেন ভক্তরা। দেবীর বিদায়ের আগে মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন নারীরা।

হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে’ মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব।

মহালয়ার মধ্য দিয়ে গত ২ অক্টোবর দুর্গোৎসবের ক্ষণগণনা ও আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর গত বুধবার ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, রবিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ আয়োজন শেষ হয়। মাঝে বৃহস্পতিবার নবপত্রিকায় প্রবেশ ও স্থাপনে হয় মহাসপ্তমী। পরদিন শুক্রবার সকালে কুমারী পূজার পাশাপাশি মহাঅষ্টমীর বিহিত পূজা ও সন্ধিপূজা হয়।
আর তিথির কারণে একই দিনে গত শনিবার দুর্গোৎসবের মহানবমী ও দশমী পূজা হয়েছে। এরপর থেকে মায়ের বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করে।রবিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে বুড়িগঙ্গা নদীর ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঢাকের বাদ্য আর গান-বাজনা ছাড়া বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা। একই সময়ে তুরাগ নদীতে চলে বিসর্জন।

নিরাপত্তার কারণে এদিন সন্ধ্যার আগেই অধিকাংশ এলাকায় বিসর্জন শেষ হয়। প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সবধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সড়কে পুলিশের টহল ও নদীতে ছিল নৌপুলিশের টহল। ফায়ার সার্ভিসের টিমও দায়িত্ব পালন করে।

প্রথা অনুযায়ী, প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে জল এনে (শান্তিজল) মঙ্গলঘটে নিয়ে তা আবার হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তিজল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমায় রেখে পূজা করা হবে। রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ধ্যা আরতির পর মিশনের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ ও মিষ্টিমুখ করেন।

এদিকে রবিবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার দৃশ্য দেখা যায়। দেবীর চরণ থেকে সিঁদুর নিয়ে তারা একে অপরের মাথায় দেন। কেউ কেউ শেষবারের মতো দেবী দুর্গার সিঁথিতে লাগিয়ে দেন সিঁদুর। সারা দেশেই মায়ের প্রতিমা বিসর্জনের শেষ মুহূর্তের আরতি হিসেবে এই সিঁদুর খেলা হচ্ছে। স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা মা দুর্গার সিঁথিতে দেওয়া সিঁদুর নিজের সিঁথিতে লাগিয়ে আশীর্বাদ নেন। সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে দেন তারা। সিঁদুর খেলা শেষে শেষবারের মতো দেবীর আরাধনা করেন।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মায়ের চরণে সিঁদুর দিতে আসা নারী পূজা সাহা বলেন, ‘স্বামীর মঙ্গল কামনায় মায়ের কাছে প্রার্থনা করি। তার পায়ে সিঁদুর ছুঁয়ে দিয়ে তার কিছুটা সিঁথিতে লাগালে সংসারে মঙ্গল হয়।’

সিঁদুর খেলতে আসা সুপ্রিয়া দেবনাথ বলেন, ‘বিয়ে ছাড়া মাথায় সিঁদুর দেওয়া যায় না। আমাদের একদিন বিয়ে হবে তখন ভালো স্বামী এবং সুখের সংসারের কামনায় আমরা সিঁদুর খেলায় আসি। বিয়ে হলে আমরাও সিঁথিতে সিঁদুর পরবো।’

প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশ্যে বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়িয়ে যেতেই ভক্তরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে। পরে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে শত শত ট্রাক প্রতিমা নিয়ে সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

ঢাকেশ্বরী থেকে শুরু করে প্রতিমা যাত্রাটি শহীদ মিনার, হাইকোর্ট, পুলিশ হেড কোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, কোর্ট এলাকা হয়ে সদরঘাট পৌঁছে। রাস্তায়, বিভিন্ন ভবনে পুলিশ ছিল সতর্কাবস্থায়। রাস্তার পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে মেলা ও সন্ধ্যায় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply