মৌলভীবাজার প্রতিনিধি::
ঈদের ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্র গুলোতে সারাদেশের ভ্রমন পিপাসু মানুষের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ করা যায়। করোনা মহামারীর দু’বছর পর এবারও হাজারো পর্যটকের কাছে তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বেড়েছে পর্যটক জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বন বিটের গহীন অরণ্যঘেরা দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হামহাম জলপ্রপাতে।
পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সাথে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের শেষাংশে দুর্গম জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন এই জলপ্রপাত। পাহাড়ের প্রায় দেড় শ’ ফুট উঁচু থেকে আছড়ে পড়া এ স্রোতধারা দেখতে কলাবন পাড়া থেকে পায়ে হেঁটে যেতে-আসতে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টার মতো সময় লাগে। দলবেঁধে বসে থাকা শিশুদের কাছ থেকে বাঁশের ছোট হাতের লাঠি নিয়ে বনবিট অফিসে নাম এন্ট্রি করে পাহাড়ের গা বেয়ে চলতে হয় অরণ্যের গহীনে। দুইপাশে আঁড়াআড়ি গাছ ফেলে রাখা পাহাড়ি ঝিরি পথের সাঁকো, পিচ্ছিল রাস্তা, পাহাড়ি চুড়া, শ্যাওলাধরা বড়সড় পাথর পেড়িয়ে অরণ্যের বিশালতার গহীনে হামহামের শাঁ শাঁ শব্দ করে আকর্ষণীয়। পথে দেখা মিলে সারি সারি কলাগাছ, জারুল, চিকরাশি কদম গাছ। এর ফাঁকে ফাঁকে উড়তে থাকে রং-বেরঙের প্রজাপতি। ডুমুর গাছের শাখা, বেত বাগান, ডলু, মুলি, মির্তিঙ্গা, কালি ইত্যাদি বিচিত্র নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ।
সরেজমিনে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হামহাম জলপ্রপাত দেখতে আসা দর্শনার্থীদের দেখা মিলে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ভৈরব, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ,সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গার শতাধিক দর্শনার্থী এসেছেন। যাতায়াতের কষ্টের দরুন অল্পসংখ্যক ছাড়া নারী পর্যটকের দেখা মেলেনি। ভৈরব থেকে আসা মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, ইউটিউব থেকে হামহাম জলপ্রপাত সম্পর্কে জেনে চাক্ষুস সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এসেছি। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পথ দিয়ে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা এই প্রথম, জায়গাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং সতর্কভাবে যেতে হয়েছে। দেশের ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই জায়গা যদি সরকারিভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় তার সৌন্দর্য বহির্বিশ্বের ভ্রমন পিপাসুদের নজর কাড়বে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে আসা ময়নুল ইসলাম জানান, যেতে আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে কিন্তু তা চাপিয়ে গেছে এখানকার মনোরম সৌন্দর্য, রোমাঞ্চিত করেছে চারিদিকের মোহনীয় আবহ। টেলিভিশনে গহীন জঙ্গল অতিক্রম করে যে সুন্দর জায়গাগুলোর দৃশ্য দেখেন নিঃসন্দেহে এখানেই আসলে সেই দৃশ্য সরাসরি উপভোগ করতে পারবেন। যারা আসবেন দলবেঁধে আসলে ভ্রমনে আনন্দের মাত্রাটা হবে অনেক বেশিমাত্রায় পাবেন।