খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সদর ও মাটিরাংগা উপজেলা সীমান্তবর্তী শীত মৌসুম আগমনে পর্যটক ভ্রমণকারী পিপাসুদের উৎকর্ষের নতুন মাত্রা খাস্রাং স্থানীয় সাজেক ভ্যালী অনুকরণে যোগ হয়েছে। অপরুপ সৌন্দর্য্যে ভৌগলিক-নিসর্গ আর জন বৈচিত্র্যের জনপদ খাগড়াছড়িতে খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছে পর্যটন সম্ভাবনা। গত এক দশকে পাহাড়ের ভূ-স্বর্গ খ্যাত ‘সাজেক’-কে ঘিরে খাগড়াছড়ি শহরে আবাসিক হোটেল-রেস্টুরেন্ট আর পরিবহন খাতে বেড়েছে বিপুল বেসরকারি বিনিয়োগ। তবে এতোকিছুর পরও শূন্যতা ছিলো বে-সরকারি পর্যটন কেন্দ্রের। এবার সেই ঘাটতি পূরণে এবং জেলার উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে মাঠে নেমেছেন, খাগড়াছড়ির ২৯৮নং আসনে সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নিজেই।
আলুটিলায় তার নিজ মালিকানার ১০একর পাহাড়ি টিলাভূমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন সর্বোচ্চ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পর্যটন কেন্দ্র খাস্রাং রিসোর্ট’ এন্ড রেস্টুরেন্ট। ত্রিপুরা জাতিসত্তার ভাষার খাস্রাং-এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো মনের প্রশান্তি। আসলে খাস্রাং বসে চতুরদিকে চোখ জোড়ালে বাস্তবে বলা যাবে মন জোড়ানো মধ্যে মনের প্রশান্তি পাওয়া যায়।
খাস্রাং পাহাড়ে সুউচ্চ থেকে বসে রাতে-আধারে দেখা মিলবে মাটিরাংগা তাইন্দং-তবলছড়ির সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য বর্ডার বাতির লাইটে ঝল-মল করা অপরুপ দৃশ্য।
আলুটিলা পর্যটন-রহস্যময় গুহা এবং রিছাং(তেরাংতৈবাকলাই) ঝরণা সংলগ্ন খাস্রাং রিসোর্ট অবস্থানগত কারণে মাত্র একমাসের মধ্যেই লাভ করেছে বিপুল ভাবে জনপ্রিয়তা।
এলাকা সরেজমিনে জেলা শহরের অনতিদূরে সুউচ্চ আলুটিলা পাহাড় চূড়ার ‘খাস্রাং’-এ গেলে চোখে পড়বে নির্মল মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। খাগড়াছড়ি-ঢাকা চট্টগ্রাম ফেনীর চলাচল প্রধান সড়ক এর মাঝে গড়ে উঠা এই বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। নানা রঙের বাহারি ফুল-পাতা আর পরিকল্পিত আলোকায়ন আর নান্দনিক কটেজ। পূর্ব-উত্তর দিকে চোখের সীমানায় দেখা যাবে পুরো খাগড়াছড়ি সর্পিল চেঙ্গী পাড়ের খাগড়াছড়ি পাহাড় ঘেরা পুরো শহর। অনেকটা পাখির চোখে দেখার মতো হয়ে সন্ধ্যায় মনে হবে এ এক নয়া দার্জিলিং। আর পশ্চিমে যতদূর চোখ যাবে, চোখের সীমানাজুড়ে পাহাড় আর পাহাড়। সন্ধ্যায় দেখতে পাবেন ভারতীয় সীমান্তের উচ্চ আলোর হেলোজেন বাতির মিছিল। যা সত্যিই ভ্রমণপ্রেমী পর্যটকদের জন্য অন্য এক প্রশান্তির জায়গা। পাহাড়ের বুক চিড়ে রয়েছে পাথর এবং সবুজ পাহাড়ের গাছ-গাছালিতে পাখির কল-কাকলি ডাক।
খাস্রাং বিনোদন কেন্দ্র ও রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা সহকারি সাংবাদিক লিটন ভট্টাচার্য্য রানা জানান, স্থানীয় ২৯৮নং আসনে সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা তার ১০একর জায়গার ওপর ব্যক্তিগত প্রচেষ্ঠায় গড়ে তুলেছেন খাস্রাং রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্র।
এখানে রয়েছে অসংখ্য সুদৃশ্য কটেজ প্রতিটিতে গড়ে ৮/১০জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আছে একটি হলরুম, যেখানে ১০০জনের সভা-সেমিনার ও অনুষ্ঠান করা যাবে। রিসোর্টে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক রাখা হয়েছে যেখানে পর্যটকরা ভাড়ায় এগুলো পরে ছবি তোলার পাশাপাশি পাহাড়ি জনজীবনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। পর্যটকদের রাতে বিশ্রামে থাকার জন্য তৈরি হয়েছে একটি আবাসিক হোটেল। যা অপরুপ দৃশ্য উপভোগ করে প্রশান্তি শ্বাস নিয়ে নিরুদেশ হওয়ার স্বপ্ন নিরোগ্য লাভ করতে পারবেন।
খাস্রাং-এর আরেক সহকারি জেসমিন ত্রিপুরা কার্ত্তিক জানান, তাদের বিনোদন কেন্দ্রটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। ফলে প্রতিদিনই কয়েক’শ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটছে। আর পিকনিক পার্টিও পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ‘গেট টুগেদার’ তো লেগেই আছে। ক্রেতার আগ্রহের কারণে এক মাসের মধ্যেই বাড়তি লোকবলের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। যদিও খাস্রাং-এ শুরু থেকেই পাঁচজন লোকবল সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, আলুটিলায় সরকারিভাবে শিঘ্রই কেবল কার স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। এটি পাজেপ হটিকালচার পার্ক হতে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র পর্যন্ত কেবল কার সংযুক্ত করবে। একারণে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরো নতুন নতুন রিসোর্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির রিছাং ঝর্ণা, মাইয়ুংকপাল পাহাড়, ও ভাইবোনছড়ার মায়াবিনী লেকটিকে ঘিরেও উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশ বেড়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আব্দুর রশিদ জানান, বে-সরকারি উদ্যোগে স্থাপিত খাস্রাং জেলার সম্ভাবনাময় পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো। পর্যটকদের জন্য এখন ট্যুরিস্ট পুলিশ সব সময় রয়েছে। পর্যটকদের যেকোন সমস্যায় ৯৯৯ অথবা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সহ-সভাপতি ও দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মো: কাশেম বলেন, পর্যটন খাতে বে-সরকারি বিনিয়োগ নিয়ে এখানকার উদ্যোক্তাদের মধ্যে দীর্ঘসময় একটা সংশয় ছিলো। বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী প্রত্যাশিত ভোক্তা পাওয়া-না পাওয়ার দোদুল্যমানতা ছিলো। কিন্তু সংসদ সদস্যের দেখানো পথ ধরে এখন জেলায় পর্যটন খাতে বিনিয়োগের একটা সুন্দর চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘খাস্রাং’ ভবিষ্যতে শিশুদের জন্যও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, যেহেতু এখানে সোনামনিদের বিনোদনের জন্য শিশুবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তাছাড়া শিশুরা খেলাধুলার পাশাপাশি পাবে পাহাড় চূড়ায় সৃজিত সুইমিং পুলে সাঁতার শেখার সুযোগ, মিনি চিড়িয়াখানা ও প্রাকৃতিকগত অক্সিজেন ফ্যাক্টরি উপভোগ করা অন্যতম।
খাগড়াছড়ি ২৯৮নং আসনে সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী কল্যাণ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্পটের পাশাপাশি খাস্রাং রিসোর্ট আলাদা মাত্রা যোগ করবে এবং পর্যটন খাতে বে-সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দয্য লীলাভূমি উপভোগ করতে অবশ্যই আসবেন।