Friday , 1 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
অতীত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি ভবিষ্যতে
--সংগৃহীত ছবি

অতীত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি ভবিষ্যতে

অনলাইন ডেস্কঃ

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পেছনে নয়, সামনের দিকে তাকাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ডোনাল্ড লু এর আগে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

অতীত নয়, ভবিষ্যতে দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের

লু তাঁর সফরের প্রথম দিন গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশ ভোজ ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড লু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের জনগণের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে গত দুই দিন আমি বাংলাদেশ সফর করেছি। আমরা জানি, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক উত্তেজনা ছিল।’

লু বলেন, ‘এখানে সংঘাতমুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছে।

ডোনাল্ড লু বলেন, ‘আমরা পেছনে নয়, সামনে তাকাতে চাই। আমরা আমাদের সম্পর্ক জোরদারের উপায় বের করতে চাই।

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে কঠিন ইস্যু হিসেবে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, শ্রম সংস্কার, মানবাধিকার ও ব্যবসার সংস্কারের উদাহরণ দেন মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘তবে কঠিন বিষয়গুলোতে কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার সম্পর্ক গড়তে চাই।’

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ইতিবাচক ইস্যুর উদাহরণ দিতে গিয়ে নতুন বিনিয়োগ, যুক্তরাষ্ট্রে আরো বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে একসঙ্গে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন লু। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুই দেশ একসঙ্গে কিভাবে কাজ করছে, সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

বাংলাদেশে করের পরিধি বৃদ্ধিতে সহযোগিতার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানানোর কথাও উল্লেখ করেন লু। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সফরে আসা তাঁর জন্য চমৎকার এক অভিজ্ঞতা।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক টুইট বার্তায় বলেছে, ‘সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে তোলা, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নতি, জলবায়ু সংকট মোকাবেলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার বিষয়ে যৌথ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।’

আমরাও সামনের দিকে এগিয়ে  যেতে চাই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশও সম্পর্ককে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চায় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

নির্বাচনের আগে তিক্ত সম্পর্ক হয়েছিল, ডোনাল্ড লুর সফরের ফলে তেমন পরিবেশ কি আর থাকছে না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘এটি আপনাদের ভাষায় তিক্ততার সম্পর্ক, আমি সেটি এভাবে দেখতে চাই না। কারণ বিভিন্ন দেশের নানা প্রত্যাশা থাকে, তারা সেই প্রত্যাশাগুলো ব্যক্ত করেছিল।’

নির্বাচন নিয়ে লুর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসানীতি নিয়েও আলোচনা হয়নি। র‌্যাব, শ্রম আইন ও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কথা হয়েছে। সেটি আমাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল। এটি প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা হয়েছে। তবে এর প্রক্রিয়াটি একটু লম্বা।’

হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতেও ডোনাল্ড লু সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে বাংলাদেশকে অর্থায়ন করতে চায়। একই সঙ্গে আমাদের করকাঠামোকে আধুনিক করার জন্য আমাদের সহায়তা করতে চায়। কর ফাঁকি দেওয়া বন্ধে তারা আমাদের সহায়তা করতে চায়।’

হাছান মাহমুদ বলেন, এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের সহায়তা চেয়েছি। লু বলেছেন, সম্পর্ক বিস্তৃত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার আরো সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আরো জোরালো সম্পর্কের আশা পরিবেশমন্ত্রীর

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের সহযোগিতা করতে চায়। আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর করতে চাই। পরিবেশ ও জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপের ভিত্তিতে আগামী দিনে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে।’

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর নেতৃত্বে সাত সদস্যের এক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পর মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী তাঁর আশার কথা জানান।

প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর চিফ অব স্টাফ নাথানিয়েল হাফট, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কাউন্সেলর আর্তুরো হাইন্সসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিনা মূল্যে ‘রিয়াল টাইম স্যাটেলাইট ডাটা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, দূষণ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তর, সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্মার্ট কৃষি, সবুজ ও জলবায়ু প্রযুক্তির অগ্রগতি, অর্থায়নে সহায়তা কামনা করা হয়েছে। এসব লক্ষ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরো আলোচনা করা হবে।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে তারা কিভাবে আমাদের সহযোগিতা করবে, সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। আমি আশাবাদী, যুক্তরাষ্ট্র তার পরিকল্পনায় আমাদের চাহিদার কথা মাথায় রাখবে।’

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, আলোচনায় পরিবেশগত ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।

প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে অংশগ্রহণ

ডোনাল্ড লু গতকাল বিকেলে ঢাকায় বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে শুভ কামনা জানান। এ সময় তিনি বাংলাদেশ নারী দলের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সেখানে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে এক প্রীতি ম্যাচে অংশ নেন ডোনাল্ড লু ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিন দিনের সফর শেষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ডোনাল্ড লুর ঢাকা ছাড়ার কথা।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply