Wednesday , 30 October 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
পোশাক নকলের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রে পর্যালোচনার মুখে বাংলাদেশ
--সংগৃহীত ছবি

পোশাক নকলের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রে পর্যালোচনার মুখে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশি তৈরি পোশাক পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর)। লোগোসহ প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক হুবহু নকল করে রপ্তানির অভিযোগ ওঠার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইউএসটিআর। চিঠি দেরিতে পৌঁছায় ব্যাখ্যার ব্যাপারে বাংলাদেশ সময় চেয়েছে।

ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে নকলের ওই অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে ইউএসটিআরের উন্মুক্ত শুনানি হবে। এই দপ্তর মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও কার্যকরের বিষয়েও দায়িত্ব পালন করে। শুনানিতে বাংলাদেশও অংশ নেবে।

এই পর্যালোচনাকে বলা হচ্ছে ‘স্পেশাল ৩০১ রিভিউ অন আইপিআর (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস) প্রটেকশন অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট’। পর্যালোচনা শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক আরোপ,  কোটা বেঁধে দেওয়া, এমনকি নিষেধাজ্ঞার মতো ব্যবস্থা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, যারা একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি  পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম  বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত, কোনো কপি পণ্য বিজিএমইএ সদস্যরা রপ্তানি করে না। এ ছাড়া রপ্তানি পণ্য নকল হলে সংশ্লিষ্ট দেশের দায়িত্ব তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া প্রত্যেক রপ্তানিকারকের একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর (নিবন্ধন নম্বর) থাকে। এ কারণে ইউএসটিআরের পর্যালোচনা নিয়ে আমাদের শঙ্কার কারণ নেই।’

বাংলাদেশের নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পর্যালোচনার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। তারা তৃতীয় একটি দেশের জরিপ থেকে তথ্য নিয়ে পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কোন প্রতিষ্ঠান এমন কাজ করে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ, চায়না, ভিয়েতনাম, ইউএইসহ বেশ কয়েকটি দেশ এমন কার্যক্রমে জড়িত।’

তিনি বলেন, তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করবেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগের কোনো সত্যতা পেলে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা  নেবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) এবং ফ্রান্সের ইউনিয়ন দেস ফাব্রিকান্তস (ইউনিফ্যাব) অভিযোগ করেছে, তাদের দেশের ক্রেতাদের দেওয়া ক্রয়াদেশে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক হুবহু নকল করে ভিন্ন দেশ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা, যা মেধাস্বত্ব আইনের পরিপন্থী।

গত বছরের জানুয়ারিতে ওই অভিযোগ ইউএসটিআর দপ্তরে জমা দেয় সংগঠন দুটি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পর্যালোচনার বিষয়টি বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে ইউএসটিআর।

এএএফএর অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫৬টি পণ্য চালান জব্দ করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশে তৈরি নকল পণ্য পাওয়া গেছে। ২০১১ সালের চেয়ে এই পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেশি।

তারা বলছে, ২০২২ সালে ১২টি দেশে বাংলাদেশে তৈরি নকল পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, মালয়েশিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রুমানিয়া, সৌদি আরব, জার্মানি ও ফিলিপাইন। মালয়েশিয়ায় ২০২২ সালে ১৭টি অভিযানে প্রায় পৌনে দুই লাখ পোশাক জব্দ করা হয়েছে, যার সবই বাংলাদেশে উৎপন্ন নকল পণ্য।

যথাযথ নীতি কাঠামোর অভাব, এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অনাগ্রহ এবং সর্বব্যাপী দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে যথাযথ মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের কাজটি ‘একপ্রকার অসম্ভব’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে এএএফএর অভিযোগে।

তাদের মতামতে বলা হয়, ‘আমরা জানি, এলসিডি হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়। কিন্তু নকল পণ্যের উৎপাদক হিসেবে বাংলাদেশকে বাড়তে দিলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তার যে প্রভাব পড়বে, সেটা সংশোধন করার উপায় থাকবে না।’

ইউএসটিআর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পর্যালোচনা শুরুর বিষয়টি জানিয়ে বলেছিল, এ বিষয়ে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করা হবে। এর আগে বলা হয়েছিল, ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ যেন অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়।

বাংলাদেশ ওই চিঠি দেরিতে পাওয়ায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস ও শুল্ক অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে, এ ব্যাপারে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘তারা তিনটি শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক বাড়াতে পারে; দ্বিতীয়ত, তারা বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোটা দিয়ে দিতে পারে; তৃতীয়ত, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। তবে বাংলাদেশের এ ধরনের শাস্তির মুখে পড়ার আশঙ্কা নেই বলেই আমি মনে করি।’

১৩ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে বৈঠক করার পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উদ্যোগের বিষয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, ইউএসটিআরের ওই চিঠির প্রেক্ষাপটে এখনই বাংলাদেশে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। কেননা যে দুটি সংগঠন ৩০১ ধারায় বাংলাদেশকে ওয়াচ লিস্টে রাখার আবেদন করেছে, সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে এমনিতেই এই সুবিধা পায়। এ ছাড়া এই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে পারেনি সংগঠনগুলো।

২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ওয়াশিংটনে ইউএসটিআরের উন্মুক্ত শুনানির বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, শুনানিতে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলে বাংলাদেশ অংশ নেবে।

সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply