Wednesday , 30 October 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
নীতিমালা ছাড়াই সড়কে অ্যাম্বুল্যান্স, ঘটছে দুর্ঘটনা

নীতিমালা ছাড়াই সড়কে অ্যাম্বুল্যান্স, ঘটছে দুর্ঘটনা

অনলাইন ডেস্ক:

অ্যাম্বুল্যান্স বলতে সাধারণ মানুষ বোঝে জরুরি চিকিৎসার কাজে কিংবা উন্নত চিকিৎসার জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিরাপদে রোগী পরিবহনের জন্য বিশেষ বাহন। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো নথিতে, সড়ক পরিবহন আইন, সড়ক পরিবহন বিধিমালায়ও নেই অ্যাম্বুল্যান্সের সংজ্ঞা। ট্রাফিক আইনেও অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। কোনো ধরনের নীতিমালা ছাড়াই বিশেষ এই বাহনটি সড়কে চলাচল করছে। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনাও।

দুই সপ্তাহ আগে চিকিৎসা শেষে রাজধানী থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে ফরিদপুরে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন তাসলিমা বেগম। সঙ্গে ছিল পরিবারের আরো ছয় সদস্য। পথে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ফরিদপুর অংশে দুর্ঘটনায় পড়ে অ্যাম্বুল্যান্সটিতে আগুন ধরে যায়।

আবার গত বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে রোগী নিয়ে ঢাকা আসার পথে গোপালগঞ্জে দুর্ঘটনায় পড়ে আরেকটি অ্যাম্বুল্যান্স। এ ঘটনায় রোগী-চালকসহ চারজন মারা যান।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রোগীর জরুরি সেবার কাজে ব্যবহার হলেও অ্যাম্বুল্যান্স একটি বাণিজ্যিক পরিবহন। ফলে এটিকে বাণিজ্যিক পরিবহন হিসেবে বিবেচনা করে এর জন্য আলাদা নীতিমালা করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুল্যান্স একটি বিশেষায়িত পরিবহন। জরুরি সেবাকাজে ব্যবহার করা হলেও এর বাণিজ্যিক দিক আছে। এ কারণে এর জন্য নীতিমালা দরকার। এর জন্য আমরা একটি কমিটি করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য আগামী দুই মাসের মধ্যে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা।’

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাম্বুল্যান্সের নীতিমালা তৈরি করতে এখনো কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। কমিটি গঠনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে।

সূত্র জানায়, নীতিমালা তৈরি হলে অ্যাম্বুল্যান্সের সংজ্ঞা যেমন স্পষ্ট হবে, তেমনি এর গঠন, ধরন ও বিশিষ্ট্যে ছাড় পাওয়ার আর সুযোগ থাকবে না। অ্যাম্বুল্যান্সের মালিকানায় কারা থাকবেন, ব্যক্তি মালিকানায় অ্যাম্বুল্যান্স চলতে পারবে কি না, এই বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে। আর অ্যাম্বুল্যান্সের মানভেদে ভাড়াও নির্ধারণ করে দিতে পারবে সরকার।

গত মে মাসে বিআরটিএর প্রতিবেদনে গাড়ির সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সারা দেশে নিবন্ধিত অ্যাম্বুল্যান্স আছে আট হাজার ২৮৭টি। অ্যাম্বুল্যান্স নিবন্ধনের এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। আর বিআরটিএর নিবন্ধন ছাড়া চলছে চার হাজার ২১৩টি অ্যাম্বুল্যান্স, যা মোট অ্যাম্বুল্যান্সের ৩৩.৭০ শতাংশ। ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুল্যান্স মালিক সমবায় সমিতির তথ্য মতে, বিভিন্ন সমিতির আওতায় দেশে প্রায় ১০ হাজার বৈধ অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল করছে। এর বাইরে ব্যক্তি মালিকানাধীন আরো প্রায় দুই হাজার ৫০০টি অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল করছে। সমিতি এসব অ্যাম্বুল্যান্সকে অবৈধ বলছে।

ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুল্যান্স মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরাও চাই অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য একটি নীতিমালা হোক। অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য বিশেষ চালক তৈরি করতে বর্তমানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। মাইক্রোবাসের চালকরাই মূলত অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছেন। নীতিমালা হলে এসব কিছু একটা শৃঙ্খলায় ফিরবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ অ্যাম্বুল্যান্স মাইক্রোবাস থেকে রূপান্তর করা। প্রকৃত অ্যাম্বুল্যান্সের দাম মাইক্রোবাসের চেয়ে তিন গুণ বেশি হওয়ায় অ্যাম্বুল্যান্স আমদানি করা হচ্ছে না। আবার কর ফাঁকি দিতে মাইক্রোবাস কিনে অ্যাম্বুল্যান্স বানিয়ে আমদানি করা হচ্ছে। এভাবে রূপান্তর করেই দেশে অ্যাম্বুল্যান্স আমদানি করা হয়।

এসব বিষয়ে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে যে ভাড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স চালানো হয় প্রকৃত অ্যাম্বুল্যান্স ওই ভাড়ায় চালানো সম্ভব নয়। ঢাকা থেকে বরিশাল মাইক্রোবাসের যে ভাড়া, অ্যাম্বুল্যান্সেরও একই ভাড়া। এই পরিস্থিতিতে মালিকরা বেশি দামে অ্যাম্বুল্যান্স কিনছেন না। আর অ্যাম্বুল্যান্সের টোল, ট্যাক্স সবই দিতে হয় বিলাসবহুল মাইক্রোবাস হিসেবে। এর জন্য আলাদা কোনো সুবিধা নেই।’

মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুল্যান্সে রূপান্তর করা গাড়িগুলো বেশি দুর্ঘটনায় পড়ছে কি না প্রশ্ন করা হলে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘বছরে কত অ্যাম্বুল্যান্স দুর্ঘটনায় পড়ছে তা আলাদা করে বলতে গেলে সময় লাগবে। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ব্যক্তিগত গাড়ির চেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে দুর্ঘটনা বেশি হয়।’

অ্যাম্বুল্যান্স দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে শিডিউলবিহীন গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত গতি, ট্রাফিক আইন না মানা এবং অপ্রশিক্ষিত চালক।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান  বলেন, ‘আমি কখনো পুলিশকে অ্যাম্বুল্যান্স চালকের লাইসেন্স চেক করতে দেখিনি। অ্যাম্বুল্যান্সের দোহাই দিয়ে খালি অ্যাম্বুল্যান্স উল্টো পথে চলতে দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুল্যান্সও একটি পরিবহন। এটি আইনের ঊর্ধ্বে নয়। জীবন বাঁচানোর এই বাহনটি জীবন কেড়ে নেওয়ার যানে পরিণত হওয়া ঠিক নয়। বহু আগেই এর জন্য নীতিমালা করা দরকার ছিল।’

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply