Wednesday , 30 October 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
দায়িত্বে অবহেলা, শাস্তি পাচ্ছেন ১৩৪ কর্মকর্তা

দায়িত্বে অবহেলা, শাস্তি পাচ্ছেন ১৩৪ কর্মকর্তা

অনলাইন ডেস্ক:

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে সম্পৃক্ততা ও দায়িত্বে অবহেলার দায়ে রিটার্নিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের পাঁচজন উপপরিদর্শকসহ ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এই ১৩৪ জনের মধ্যে ১২৬ জনই প্রিজাইডিং অফিসার। এর মধ্যে একজন প্রিজাইডিং অফিসারকে দুই মাসের জন্য বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনিয়মের দায়ে ১৪৫ নির্বাচনী কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টরা ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

তবে অনিয়ম থেকে দায়মুক্তি পেয়েছেন সরকারদলীয় প্রার্থী, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার।

এ ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ বহুল আলোচিত বিধান ৯১-ই এবারও প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন কমিশন। এই ধারা অনুযায়ী যার পক্ষে অনিয়ম, সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রাখে নির্বাচন কমিশন।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে গাইবান্ধা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি এ সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন।

সিইসি জানান, আগামী সপ্তাহে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের সংক্ষিপ্ত তফসিল ঘোষণা করা হবে। ওই নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও এসপির কোনো অনিয়মের প্রমাণ মেলেনি।

কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার ব্যতীত অন্য সংস্থা বা বিভাগ থেকে নির্বাচনে দায়িত্বে আসা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্ব স্ব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে এক মাসের মধ্যে ইসিকে অবহিত করতে হবে। ’

নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে কোনো সংসদীয় আসনের নির্বাচনে অনিয়মের জন্য সব কয়টি কেন্দ্র বন্ধ করার ঘটনা এই প্রথম। সেই অনিয়মে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বড় একটি অংশকে শাস্তির আওতায় আনাও নজিরবিহীন।

সিইসি মনে করেন, এ ধরনের অনিয়ম রোধে বর্তমান কমিশনও বার্তা দিয়েছে, ভবিষ্যতে নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু অনিয়মের নেপথ্যে যাঁরা তাঁরা পার পেয়েছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দীর্ঘ প্রতিবেদনে ভোটে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে বিশদভাবে তুলে ধরেছিল ইসির গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। বিশেষ করে ডিসি-এসপিও ভোটে অনিয়মে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ডিসি-এসপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ একটি জেলার প্রশাসনিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর রক্ষাকবচ হিসেবে ধরা হয় ডিসি-এসপিকে।

সেই ডিসি-এসপির অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৩৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক পর্যন্ত করেনি ইসি।

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও ইসির সিদ্ধান্ত : ১২৫টি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন। তাঁদের নামের তালিকা নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদাচরণের কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে। উদয়ন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও ৯৪ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. সাইফুল ইসলামকে চাকরি থেকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অসদাচরণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এসংক্রান্ত ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করার জন্য বলা হয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী কমিশনারের নাম জেনে (তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ নেই) তাঁকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালনের বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দেবে। রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলামের (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন।

সিইসি তাঁর সুপারিশে যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তাঁরা হলেন ২ নম্বর কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরুণ কুমার, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৫৪ নম্বর কেন্দ্রের মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৫৯ নম্বর কেন্দ্রের মো. আনিছুর রহমান, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৬২ নম্বর কেন্দ্রের কনক রঞ্জন বর্মণ, এসআই (সাদুল্যাপুর থানা) ও ১০৫ নম্বর কেন্দ্রের মো. দুলাল হোসেন, এএসআই (আটোয়ারী থানা, পঞ্চগড়)।

আগামী সপ্তাহে পুনর্ভোটের তারিখ : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, পুনর্ভোটের তারিখ আগামী সপ্তাহে জানানো হবে। খুবই সংক্ষিপ্ত একটি সময় দেওয়া হবে।

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা দিয়ে ঢাকার নির্বাচন ভবন থেকে মনিটরিং করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ভোটে অনিয়ম ধরা পড়লে ভোট গ্রহণের চার ঘণ্টার মাথায় ১৪৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫১টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply